ছবি : মেসেঞ্জার
১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তানি বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিলেন, বিনা বাধায় নওগাঁয় প্রবেশ করবেন। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের পরেও পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়লেন তাঁরা। বিজয়ের পরদিনেও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় নওগাঁয়। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা।
বিজয়ের দুই দিন পর নওগাঁ হানাদারমুক্ত হওয়ায় দিনটি নওগাঁবাসীর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে আছে। এ দিবসটি নানা আয়োজনে উদ্যাপন করে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ বুধবার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে নওগাঁ হানাদারমুক্ত দিবস উদ্যাপন করেছে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ।
দিবসটি উপলক্ষে একুশে পরিষদের আয়োজনে আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের শ্রদ্ধার জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ মিনার চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের সরিষহাটির মোড়, বাটার মোড় ও ব্রিজের মোড় হয়ে শহরের প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রফিকুল ইসলাম, একুশে পরিষদের উপদেষ্টা কায়েস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আল মেহমুদ, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক নাইস পারভীন প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণের পর মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ সদরের ফতেপুরের গড়ের বাড়ি নামক স্থানে গ্রুপ কমান্ডারদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরের দিন সকাল ৭টায় গড়েরবাড়ি থেকে প্রায় ৩৫০ মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। দলটি শহরের কাছাকাছি জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি আসতেই পাকিস্তানি সেনারা মর্টার শেল ছোড়া শুরু করে। শহরের ভেতরে যতই ঢুকছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, ততই বাড়ছিল শেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলি ছোড়েন। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মাঝে ছোট যমুনা নদী। পরের দিন মিত্রবাহিনী যোগ দিলে পাকিস্তানিদের পতন ত্বরান্বিত হয়।
পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের সেই দৃশ্য আজও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের চোখে ভাসে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন লিটন ব্রিজ দিয়ে শহরের ভেতরে প্রবেশ করছিলাম, তখন দেখি, পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র মাটিতে রেখে রাস্তার দুই ধারে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল ১০টার দিকে শহরের কেডি স্কুলের মাঠে পাকিস্তানি মেজর সাঈদ তাঁর অধীন ১ হাজার ৯০০ সেনা নিয়ে মিত্রবাহিনীর মেজর পি বি রাওয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আনুষ্ঠানিকতায় ৭ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন গিয়াস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।’
ডিএম আব্দুল বারী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ করার দুই দিন পর নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয়। এই কথা আজকের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না। আনুষ্ঠানিক বিজয় অর্জনের পর দিনেই নওগাঁয় তুমুল যুদ্ধ হয়। একুশে পরিষদের মতো সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত।
মেসেঞ্জার/বেলায়েত/তুষার