ঢাকা,  সোমবার
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

গঙ্গাচড়ায় বিএনপির বঞ্ছিত গ্রুপের মানববন্ধনে আহবায়ক কমিটির হামলায় আহত ১০

সরকার মাজাহরুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৭:২২, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

গঙ্গাচড়ায় বিএনপির বঞ্ছিত গ্রুপের মানববন্ধনে আহবায়ক কমিটির হামলায় আহত ১০

ছবি : মেসেঞ্জার

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে অন্তুভূর্ক্তির প্রতিবাদের বিএনপির বঞ্ছিত নেতাকর্মীদের মানববন্ধনে মারামারির ঘটনায় তোলপাড় চলছে রংপুরে। এসময় উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসরিপনা করার অভিযোগ তুলেছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া ইউনিয়নের খলিফার বাজারে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার বিকেলে বিএনপির মর্নেয়া ইউনিয়নের আহ্বায়ক মীর কাশেম মিঠু ও সদস্য সচিব আব্দুল মাবুদ এর নেতৃত্বে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দোসরদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তা বাতিলের জন্য মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে অংশ নেন মর্নেয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলামসহ ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীরা। এসময় মানববন্ধনকারীরা আওয়ামী লীগের লোকজন বাদ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করার দাবিতে বক্তব্য দেন। এরমধ্যেই মিঠু ও মাবুদ কমিটির মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে ব্যানার কেঁড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু হয় হট্টগোল ও হাতাহাতি। পরে সিনিয়র নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এসময় উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসরিপনা করার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি এখন টক অব দ্যা রংপুর।

এ বিষয়ে মানববন্ধনকারী পক্ষের নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি মর্নেয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের ২ বারের সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের ২ বারের সহ-সভাপতি ছিলাম। কিন্তু বর্তমান মর্নেয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও মিঠু এবং সদস্য সচিব মাবুদ তারা আওয়ামী লীগের দোসর। গত ১৬ বছরে তারা বিএনপির নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে ওপেনে নৌকা এবং লাঙ্গলের ভোট করেছে। প্রকাশ্যে নৌকা এবং লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়েছে ও বক্তব্য দিয়েছে। যার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু তাদেরকেই আবারও আহবায়ক ও সদস্য সচিব করা হয়েছে। তারা এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকা এবং লাঙ্গলের পক্ষে যারা ১৬ বছর ভোট করেছে, সুবিধা নিয়েছে। তাদেরকেই নেতা বানাচ্ছে। এই কমিটি স্থগিত করে প্রকৃত জাতীয়তাবাদিদের ভেতরে যারা ত্যাগি, জুলুম নির্যাতনের শিকার এবং সাংগঠনিক তাদেরকে নিয়ে আমরা নতুন করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, ‘এসব বিষয় আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দকে প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখনও কোন প্রতিকার পাইনি। সেকারণে মানববন্ধন করে আমরা আবারও একই দাবি তুলেছি শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু মিঠু ও মাবুদ সাহেবের আওয়ামী দোসরদের নিয়ে আমাদের মানববন্ধনে লাঠিশোঠা দিয়ে হামলা করেছে। এতে আমাদের অনেক সিনিয়র কর্মী ও নেতা আহত হয়েছেন। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা  আশা করি সংগঠন উর্ধতন নেতৃবৃন্দ বিষয়টি দেখবেন এবং আওয়ামী দোসরদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবেন।

এ ব্যপারে মর্নেয়া ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান আহবায়ক মীর কাশেম মিঠু জানান, ‘যারা এই মানববন্ধন করছে তারাই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনই বিএনপিতে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তারা কিভাবে করলো মানববন্ধন, তারা আওয়ামী লীগ, তারা জাতীয় পার্টির লোক,  এটা আমার বোধগম্য নয়। সেকারণেই তাদের বাঁধা দেয়া হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির দোসর। তারা বিএনপির মধ্যে একটা বিশৃঙখলা তৈরির জন্যই মানববন্ধন করেছে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল এবং মৎসজীবী দলের ইউনিয়ন আহবায়ক শহিদুল আমিনের ফরম যাছাই-বাছাইতে আউট হয়ে গেছে। সে কিভাবে আমাদের বিএনপিতে আসবে। এদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে যা করা লাগে সেটা আমরা করবো। পরবর্তীতে যেন আমাদের বিএনপির বিরুদ্ধে এ ধরণের কোন বিশৃঙখলা করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুত আছি। যেখানেই যাওয়া লাগে, যা কিছু করা লাগে আমরা করবো।’

এ ব্যপারে রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু জানান, ‘মর্নেয়া ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনে অনিয়ম নিয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়গুলো আমরা যাছাইবাছাই করছি। এরমধ্যে এ সংক্রান্ত মানববন্ধন নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে। সেটাও আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মেসেঞ্জার/তুষার