ছবি : মেসেঞ্জার
বান্দরবানে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের ভূমি দখল মামলায় দূর্গা মন্দির কমিটিকে আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মন্দিরের ফটকে জড়ো হয়ে গণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে জেলা সদরের মারমা সম্প্রদায়ের কয়েকশ নারী পুরুষ। গতকাল বেলা সোয়া ৩ টার দিকে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের পিছনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে এ বিষয়ে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেসময বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে পুলিশ উপস্থিত ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সভাস্থল থেকে কোন শ্লোগান ছাড়া নারী পুরুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বিহারের পিছনে দখল করা দূর্গা মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে পৌঁছে গণ বিক্ষোভ শুরু করে তারা। পরে বিক্ষোভের খবরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ উপস্থিত হয়। এর আগে বিহার কমিটির পক্ষে বিক্ষোভে একক বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা। তিনি বলেন, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের ভূমি দখল সংক্রান্ত মামলার আদালতে চলমান রয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ ভূমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞ দেন ১৯৯৯ সালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল জজ আদালত। যা এখনো বহাল রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা ভূমিতে নিজেদের দখল পাকাপোক্ত করতে মন্দির না করে দোকান ঘর তৈরির কাজ শুরু করে দূর্গা মন্দির কমিটি। তাদেরকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয় স্মরণ করিয়ে কাজ না করতে বলার পরও কাজ চালাচ্ছিল তারা। এছাড়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) সরেজমিনে এসে কোন কাজ না করতেও কমিটিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এসিল্যান্ড চলে যাবার পরপরই আবারো কাজ শুরু করে তারা। সবশেষ গত শুক্রবার কাজ থামিয়ে দেয় পুলিশ। তবে পুলিশ চলে যাবার পর একইভাবে কাজ শুরু করে তারা। তাই আজ এ গণ বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছে মারমা সমাজ।
এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে কেএসমং মারমা বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় সেনা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কোন কাজ না করতে নির্দেশ দিয়েছে। তারপরও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কী বোঝাতে চাচ্ছে দূর্গা মন্দির কমিটি। কী বার্তা দিতে চাচ্ছে তারা।
তার বক্তব্য শেষে সেনা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ ভূমি পুলিশের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। ওই সময় কোন পক্ষ ভূমিতে প্রবেশ করতে পারবে না। বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিক্ষোভকারীরা চলে যাবার পর ওই জায়গায় রান্নার জন্য মজুদ করা জিনিসপত্র সংশ্লিষ্টদের ডেকে ফিরিয়ে দেয় প্রশাসন। এরপর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চাইথোয়াইহ্লা মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী, জোনাল স্টাফ অফিসার ক্যাপ্টেন মো. মোস্তাহিদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়সল উদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ পারভেজ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, গতকাল শুক্রবার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে দূর্গা মন্দিরের দোকান ঘর তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, গত সপ্তাহে ডিসি স্যারের নির্দেশে তিনি নিজে ঘটনাস্থলে এসে চলমান দোকন ঘর তৈরির কাজ বন্ধ করেছিলেন।
মেসেঞ্জার/মংটিং/তুষার