ঢাকা,  রোববার
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

রংপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন 

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

রংপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন 

ছবি : মেসেঞ্জার

আইনের দিক থেকে আওয়ামী লীগের ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা না থাকলেও ছাত্রজনতা, বাংলাদেশের আপামর মানুষ ফ্যাসিবাদি গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধকারী আওয়ামী লীগকে কোনভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে রেলিভ্যান্ট এবং নির্বাচনে আসতে দেয়া হবে না। সেজন্য আবারও আমরা রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে জুলাই বিপ্লবে রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার আট শহীদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাতের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন। এসময় রংপুরের সংগঠক আলমগীর নয়ন, আরিফুলসহ জেলা মহানগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেয়া সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে  আখতার হোসেন বলেন, "বাংলাদেশের মানুষের উপরে গণহত্যা চালিয়ে যে ভয়ংকর পাপ আওয়ামী লীগ দল হিসেবে করেছে, সে পাপ থেকে মুক্তির এখন পযন্ত উপায় তারা অবলম্বন করে নাই। আওয়ামী লীগের বিচার এখন পর্যন্ত হয় নাই, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনও পর্যন্ত আমাদের সহযোদ্ধাদের খুনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন যায়গায় খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদেরকে কোনভাবেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না৷"

নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আখতার হোসেন বলেন, " বিদ্যমান  রাজনৈতিক দলগুলোর লুটেরা এবং বুর্জোয়া হওয়ার যে মানসিকতা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জাতীয় স্বার্থে জাতীয় বুর্জোয়া হতে হবে। দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের সুবিধাগুলো দেখতে হবে এবং একই সাথে যে অর্থ পাচার হয়, পাচারের মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।"

জুলাই বিপ্লবের অন্যতম মেন্টর আখতার বলেন,"আমরা জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু এখনো অনেক ফ্যাসিবাদী নীতি, অনেক পুরনো নীতি, কানুন, ব্যবস্থা রয়ে গেছে। আমরা চাইবো আমাদের যে সংগ্রাম ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত; তার জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির যে সংগ্রাম চলছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সংগ্রাম চলছে, সারাদেশের মানুষের যে সংগ্রাম চলছে । এই সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ তার প্রান্তে আমরা পৌঁছাতে পারবো"।

আখতার হোসেন বলেন, "বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যখন অভ্যুত্থান হয়। তখন ছাত্র-তরুণরা বাংলাদেশের রাজপথ এমনভাবে দখলে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির জন্য তারা তাদের জীবন দিতেও কুন্ঠাবোধ করে নাই। 

আখতার হোসেন বলেন, "পাঁচ আগস্টের সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আমরা দেখেছি। আমরা সেখানে নতুন এক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তির উল্লম্ফুন হবে। সেটাই আমরা সেদিনই দেখেছি। এই দীর্ঘ ৩-৪ মাসের পথপরিক্রমায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতার সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ হয়েছে। এবং বিভিন্ন যে জরিপগুলো আছে। তাতে এটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে- বাংলাদেশের মানুষ নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি, যে শক্তির নেতৃত্বে থাকবে তরুণরা। এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির, রাজনৈতিক দল প্রত্যাশা করে। আমরা ছাত্র-তরুণরা মিলে যে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছি। এই রাজনৈতিক দল আমরা মনে করি নাগরিক কমিটি যে ভাষার উৎপাদন করেছে সেই ভাষায় এই দলটি গঠিত হবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা বাংলাদেশে বিবাদমান যত পক্ষ আছে। আদর্শিক পক্ষ গুলো আছে। সেই আদর্শিক পক্ষগুলোর সাথে দলাদলিতে আমরা লিপ্ত হতে চাই না। বাংলাদেশের জন্য সার্বিকভাবে আমরা একটি  মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক চর্চা করতে চাই। যে রাজনীতির ভিত্তি হবে বাংলাদেশের স্বার্থ। এই স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেবার কেউ চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলাই হবে আমাদের কর্তব্য। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করাই হবে আমাদের জীবনের শপথ।"

আখতার বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রংপুরের মত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নানাবয়সী মানুষ আমাদের সাথে একত্রিত হয়েছেন। তারা চান যে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব হোক। আমরা বিশ্বাস করি সে রাজনৈতিক শক্তি সামনের দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা করবে। মেহনতী মানুষের মুক্তির দিশারী হয়ে উঠবে।"

নাম চূড়ান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আক্তার হোসেন বলেন "এরই মধ্যে আমরা অনেকগুলো নাম পেয়েছি। সেখান থেকে ছাত্র-জনতা এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এ ধরনের একটা নাম আমরা সিলেক্ট করব।

বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে আখতার হোসেন বলেন, "দেশের আইন ছিল শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো পুলিশ কাজ করতেছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব জায়গায় এখন আওয়ামী দোসর। অনেক জায়গায় মামলার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এবং সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। সরকার এসব ঠেকাতে ব্যর্থ। আমাদের দাবি বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি মাঠে কাজ না করতে চায় তাহলে তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারী তরুণদের নিয়োগ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।"

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন প্রসঙ্গে আখতার বলেন, "দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমরা আশা করব সরকার যে সিন্ডিকেটগুলো আছে এবং যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে।"

পরে তিনি শহীদ পরিবারগুলোর বাড়িতে যান, সেখানে শহীদদের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের লোকজনের খোঁজ খবর নেন।

মেসেঞ্জার/তুষার