ঢাকা,  বুধবার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

চাঁদপুরের মেঘনায় আল-বাকেরা জাহাজে ৭ খুন

ডাকাতি নয়, পরিকল্পিত হত্যা দাবী স্বজনদের, রহস্যে উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ

চাঁদপুর প্রতিনিধি  

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:৩২, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ডাকাতি নয়, পরিকল্পিত হত্যা দাবী স্বজনদের, রহস্যে উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ

ছবি : মেসেঞ্জার

চাঁদপুরের হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর মাঝেচর এলাকায় সারবাহী জাহাজ এমভি আল-বাকেরাহ মাষ্টার ও চুকানিসহ ৭জন খুনের ঘটনাটি কেউ কেউ ডাকাতি বললেও স্বজনদের দাবী এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের প্রতিটি দৃশ্য দেখেই এমন মন্তব্য করছেন তারা। পুলিশও এই ঘটনাকে সন্দেহের মধ্যে রেখে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা মরদেহ শনাক্তের জন্য আসা স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে। এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে জাহাজের নিহতদের মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত হাইমচর থানায় মামলা হয়নি।

সকাল ১০টার পর থেকে মরদেহগুলো ময়না তদন্তের জন্য মর্গে নেয়া হয়। সেখানেই তাদের স্বজনদের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সোমবারে সুরতহাল এবং ময়না তদন্তে কাজ করছে নৌ পুলিশ।

হত্যার শিকার জাহাজের লস্কর শেখ সবুজ (৩৫) এর ছোট ভাই সাদিকুর রহমান বলেন, জাহাজের মাষ্টার গোলাম কিবরিয়া আমার মামা। তার মাধ্যমেই আমার ছোট ভাই সবুজ কাজে আসেন। তিনি লস্কর হিসেবে কাজ করেন। ১দিন আগে আমার সাথে ভাইয়ের কথা হয়েছে।

যে মর্মান্তিক ঘটনায় আমার ভাই হত্যার শিকার হয়েছে, আমি চাই এমন ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে। এই জাহাজে থাকা প্রত্যেকটি হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবী করছি। ঘটনাটি যাতে করে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে আমি এটিও দাবী করছি।

এই হত্যাকান্ডের একই ধরণের দাবী জানালেন জাহাজের মাষ্টার গোলাম কিবরিয়ার ভাই আউয়াল হোসেন। তিনি বলেন, এই মাসেই আমার ভাইয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হত। তিনি ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে যেতেন। উনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের জানুয়ারি মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘটনার পরে সব পকিল্পনাই শেষ।

হত্যার শিকার আমিনুল মুন্সীর বড় ভাই মো. হুমায়ুন, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিনের মামাত ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, ঘটনাটি আমরা ডাকাতি শুনলেও খুনের ঘটনার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। কারণ প্রত্যেকটি নিহতের মাথায় ধারলো অস্ত্রের আঘাত। যারা হত্যার শিকার হয়েছেন সকলেরই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পাওয়াগেছে। এমনকি জাহাজে থাকা ৫ জনকে উদ্ধারের সময় তাদেরকে শোয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এদিকে সোমবার নিহত ৭জনের নাম জানাগেলেও ঠিকানা জানা যায়নি। স্বজনদের সাথে কথা বলে তাদের পুরো পরিচয় মিলেছে। নিহত ৭ জন হলেন, জাহাজের মাষ্টার গোলাম কিবরিয়া ফরিদপুর জেলা সদরের জোয়াইর গ্রামের মৃত আনিছ বিশ্বাসের ছেলে। লস্কর শেখ সবুজ (৩৫) তারই আপন ভাগিনা। সবুজ একই গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের ছেলে।

সুকানি আমিনুল মুন্সী নড়াইল জেলার লোহাগড়া তানার ইটনা ইউনিয়নের পাঙ্খারচর গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। লস্কর মো. মাজেদুল (১৬) মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার মো. আনিছুর রহমানের ছেলে। একই উপজেলা ও পলাশ বাড়িয়া গ্রামের লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬) দাউদ হোসেনের ছেলে। আর ইঞ্জিন চালক মো. সালাউদ্দিন (৪০) নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাহোরিয়া ১১ নলি গ্রামের মৃত আবেদ মোল্লার ছেলে এবং বাবুর্চি কাজী রানা (২৪) মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল গ্রামের কাজী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন সুমন বলেন, ঘটনার পর ৭জনেরই ময়না তদন্তের কাজ চলছে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর এবং একই সাথে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নিহত ৭ পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ও নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা মোট ৩৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের থেকে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মেসেঞ্জার/আজাদ/তারেক