ছবি : মেসেঞ্জার
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)'র চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্ব ফাঁকি দেয়াসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।
অভিযোগপত্রের সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিসংখ্যান অফিসে যোগদান করার পর থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ক্রমাগত বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি সকল কর্মচারীদের কমবেশী আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে কার্যালয়ে নিজ ইচ্ছাবলে যা খুশি তাই করে চলেছেন। অর্থলোভের কারণে যোগদান করেই কার্যালয়ের তহবিল থেকে কৌশলে লক্ষাধীক টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এরপর দায়িত্বে ফাঁকি দেয়া তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার্যালয় পরিসংখ্যান সহকারী রিপনকে কৌশলে ব্যবহার করে দাযিত্ব ফাঁকি দিয়ে নিজ জেলা সাতক্ষীয়ায় ব্যক্তিগত কাজে সময় দেন তিনি। জেলা কার্যালয়ের বাৎসরিক মালামাল কেনাকাটার নামে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই কার্যালয়ের বড় বরাদ্দের টাকায় মালামাল না কিনে আত্মসাত করেছেন।
অভিযোগ আছে, শ্রম শক্তি প্রকল্প, আর্থসামাজিক ও জনমিতিক শুমারী কাজে চুয়াডাঙ্গা জেলায় যোগ্য শিক্ষিত ও বেকার যুবক তরুণ থাকার পরও মেহেরপুর জেলার একই পরিবারের ৪ জন যথাক্রমে মাহামুদা আক্তার, তার মেয়ে নাজিয়া ফারহা, বোন জামাই রোক্তিম ও তার মেয়ে জামাই হিমেলকে কাজ দিয়ে অনিয়ম করেছেন। এ কাজ দেয়া নিয়েও জেলা এবং উপজেলা কার্যালয়গুলোর সকল স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু হয়রানীর কারেণ কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি। সম্প্রিত স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রার সার্ভে (এসভিআরএস) প্রকল্পে ৩৩ জন রেজিস্ট্রার নিয়োগেও চরম অনিয়ম করে কার্যালয়ের কর্মচারীদের নিকট আত্মীয়দের নিয়োগ কাজে সহযোগীতা করেছেন। এ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। কোন কর্মকর্তা ও স্টাফদের নিকট আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনরকম সুপারিশ করা যাবে না, এমন নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। এর ব্যত্যয় প্রমাণীত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন ওই প্রকল্পের পরিচালক ও মহাপরিচালক।
এছাড়া দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের বাৎসরিক বাজেটের অর্থ যথানিয়মে না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুেদ্ধ।
বিগত স্বৈরাচার শাসকের অনুগত হয়ে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় অনাকাঙ্খিত বিল ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কার্যালয়ের সরকারী গাড়ী নিজের পারিবারিক সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কাজ তদারকির জন্য প্রতি মাসে ১০০ লিটার জ্বালানী তেল বরাদ্দ থাকলেও গাড়ী না চালিয়েও তিনি ব্যয় দেখিয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা তুলে নেন। তিনি সরকারী টাকা লোপাট করে সাতক্ষীরা জেলার নিজ এলাকায় জমিসহ ৩ তলা বাড়ীও করেছেন।
এদিকে ওই কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুলকে সার্বিক আর্থিক সুবিধা দিয়ে এবং অনৈতিক সুযোগ দিয়ে মাথায় তুলেছেন। ওই নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুল পতিত স্বৈরাচার সরকারের অনুগত হওয়ায় তাকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে তালিকায় নাম দিয়ে কাজ দেন। এছাড়া আর্থসামাজিক ও জনমিতিক শুমারী প্রকল্পে কাজ দিয়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা পাইয়ে দেন। ওই কাজে জন প্রতি ৪৬ হাজার করে সম্মানী দেয়া হয়েছিলো। চলতি বছরে চলমান অর্থনৈতিক শুমারী প্রকল্প কাজে এসএসসি ডিপ্লোমা পাস করা নিরাপত্তা প্রহরীকে অযোগ্যতার পরও আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়ুইটুপি ও কুতুবপুর ইউনিয়নের আঞ্চলিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওই নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুল তার নিজের স্ত্রীসহ তার আপন শালিকা, ছোট শ্যালক, বড় শ্যালকের স্ত্রীকে গণনাকারী ও সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অজ্ঞাত কারণে জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম জিম্মি হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুলকে প্রতিটি প্রকল্পের কাজ দিয়ে অনৈতিকভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা প্রহরীও কার্যালয়ে যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন না।
সংবিধান সংষ্কারে জনমত জরিপ প্রকল্পের অধীন মাত্র ৬ দিন কাজ করিয়ে তার নিয়োগ করা ব্যক্তিরা ১৮ হাজার টাকা করে পেয়েছে। জেলাব্যাপী ১২ জন কাজ করেছেন। তারা পেয়েছে মোট ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ ভাতা পেয়েছে জন প্রতি ১ হাজার ৯০০ টাকা করে। সবচেয়ে বড় খবর হলো নামে বেনামে মেয়েদের দিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহর এলাকা এড়িয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলায় কাজ করানো হয়েছে। এ কাজে পরিসংখ্যান সহকারী রিপনের সহযোগীতা রয়েছে।
এসভিআরএস প্রকল্পের ৩০জন রেজিষ্টার নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছিলো। এ প্রকল্পের কাজ ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই সঠিক নয়। যে বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা ভিত্তিহীন।
মেসেঞ্জার/লিটন/তুষার