ছবি : মেসেঞ্জার
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় তামার ব্যবহারের কারণে। দেশে ধুমপায়ীর মধ্যে ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। গত ২০১৯ সালেও তামাক ব্যবহারকারীর নারীর সংখ্যা ছিল ৭ শতাংশ।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দিনাজপুরের একটি বেসরকারী সংস্থার অডিটরিয়ামে ‘তামাক ব্যবহারে বর্তমান পরিস্থিতি; চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ বিষয়ক সাংবাদিকদের সাথে কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্লিন্ড মিশন-এর আয়োজনে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন তামাক সম্পর্কিত জাতীয় বিশেষজ্ঞ শুভাশীষ চন্দ্র মহন্ত, আবেদুল ইসলাম, তারেক মাহমুদ প্রমুখ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে ১২৫ কোটির বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৮০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় তামাক ব্যবহার রোগের কারণে। যার মধ্যে ৭০ লাখ মৃত্যু সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে এবং প্রায় ১৩ লাখ সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকের কারণে। বিড়ি এবং সিগারেটে ৪ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে যার মধ্যে ৪৩টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম। বিড়ি-সিগারেট ও তামাকে আর্সোনিক, ডিডিটি (বিষ), কার্বন মনোক্সাইড, ক্যাডমিয়ামের মত পদার্থ রয়েছে যেগুলো পারমানবিক অস্ত্র, ব্যাটারি তৈরির কারখানা ও গাড়ীর ধোয়ায় ব্যবহৃত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়, তামাকের কারনে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন লোক মারা যায়। ধারনা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর বিশ্বে তামাকের কারণে এক কোটি লোক মারা যাবে, যার মধ্যে ৭০ লক্ষই বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের মানুষ।
২০২৩ সালের ওয়াল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ডেটা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছরের ওপরে ধুমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০১৯ সালেও ছিল ৩৫ শতাংশ। ধুমপানের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আগামী ৩০ বছরে বিশ্বব্যাপী তামাকজনিত মহামারির ফলে ২৫ কোটি শিশু-কিশোর-কিশোরী অকাল মৃত্যু ঘটবে। ফলে বিশ্বব্যাপী ধুমপান ও তামাকজনিত মৃত্যুর হার এইচআইভি ও এইডস, যক্ষ্মা, প্রসবকালীন মৃত্যু, যানবাহন দূর্ঘটনা, আত্মহত্যা এবং হত্যাকান্ডসহ সকল মৃত্যুহারকে ছাড়িয়ে যাবে।
যাদের ক্যান্সারে মারা যান তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ তামাক ব্যবহারের কারণে। তাদের মধ্যে ৯০-৯৫ ভাগ ফুসফুস এবং ৮০-৯০ ভাগ মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যারা ধুমপান করেন তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মৃত্যুঝুকিতে থাকেন। তারা জীবনের ১০ বছর আয়ু থেকে বঞ্চিত হন।
দেশে যারা তামাক গ্রহণ করেন না তাদের মধ্যে ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হন। যারা পরোক্ষ ধুমপানের শিকার তাদের স্বাস্থ্যের ঝুকি আরও বেশি। ধুমপানের কারনে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগের সাথে জড়িত হয়ে যায়।
২০১৮ সালে বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু ও অসুস্থ্যতার কারনে অর্থনৈতিক ক্র্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ওই বছরের জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৬ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪৯ তম সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে বিষয়টির ধারনাগত ও আইনগত দিকের উন্নয়নে পদক্ষেপ গৃহীত হয়। গত ২০০৩ সালের মে মাসে জেনেভায় ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে ১৯২টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি কর্তৃক চুক্তি অনুমোদিত হয়। তামাক নিয়ন্ত্রন বিষয়ক আর্ন্তজাতিক চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার এবং প্রকাশ্য ধুমপানের বিস্তার রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে সহযোগিতা করা। এই দলিলে তামাকের ব্যবহারকে বর্তমান বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মেসেঞ্জার/কুরবান/তুষার