ঢাকা,  বুধবার
০১ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

আশুলিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার 

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আশুলিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ

ছবি : মেসেঞ্জার

ঢাকার আশুলিয়ায় ভবন মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুল মালিক আশুলিয়া থানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাননি। ফলে ওই স্কুলের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া ও পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আশুলিয়ার পশ্চিম গুমাইল এলাকার স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুলের জমি ও ভবন মালিকের একক স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে ড. রেহেনুমা খানম নামের এক নারী উদ্যোক্তা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের উন্নত এবং মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও পুষ্টির কথা চিন্তা করে সেবামূলক সংগঠন 'হিরোজ ফর অল' এর পক্ষ থেকে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হাতে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব থেকে পরিচিত আশুলিয়ার পশ্চিম গুমাইল এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী জয়নব খানম ইভার মালিকানাধীন ৪ শতাংশ জমি ১৫ বছরের জন্য ইজারা (ভাড়া) হিসেবে নিয়ে সেখানে ৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা একটি ভবন করেন হিরোজ ফর অল কর্তৃপক্ষ। পরে সেখানে 'স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুল' নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন এবং প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করান। পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদেরকে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার (দুধ, ডিম, কলা) প্রদান করতেন। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কিছুদিন পর থেকে ইজারাদাতা এবং তার স্বামী মিলে শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অবিভাবকদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকেন। বিষয়টি মৌখিকভাবে বার বার ইজারাদাতা জয়নব খানম ইভাকে বলা সত্বেও তিনি তা বন্ধ করেননি। এমনকি তিনি ব্যানার খুলে ফেলে দেন এবং একপর্যায়ে স্কুলের কেয়ারটেকার ও স্কুলের শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেন। সেই সাথে স্কুলের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র, কম্পিউটার সহ সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ সহ স্কুলে তালা লাগিয়ে দেন। যার ফলে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব ঘটনায় গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দেয়া হতো শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জমির মালিক তাদের ওই স্কুলে যেতে ভয়ভীতি দেখাতো। এরপরেও বাচ্চারা স্কুলে যেত। কারণ বিনামূল্যে পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার প্রদান এটা অন্য কোথাও নেই। তাই ভয়ভীতি দেখালেও সেখানে পাঠাতাম। কিন্তু ওই মহিলা স্কুলে তালা লাগিয়ে দেয়ায় এখন স্কুল বন্ধ। গরীব মানুষ আমরা, এখন বাচ্চাদের কোথায় পড়াবো জানিনা। পড়াশোনা বন্ধ করে দিছি।

স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক মুছা করিম রিপন জানান, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে একটি আধুনিক কারিকুলামের শিক্ষা প্রদানের লক্ষেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া স্কুলে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিলো, যেখান থেকে স্থানীয় তরুণ তরুণীরা বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছিলো। কিন্তু স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জয়নব ও তার স্বামী ভবনটি দখলে নিতে নানা কৌঁশল করতে থাকে। এনিয়ে তাকে অন্তত তিনবার লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং প্রতারণার অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে। স্কুলটি খুলে যাতে এর কার্যক্রম শুরু করতে পারি সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তা না হলে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

জমির ইজারাদাতা জয়নব খানম ইভা মুঠোফোনে জানান, এটা ঠিক ১৫ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছি। কিন্তু ভাড়া নেওয়ার পর তারা ঠিক মত ভাড়া পরিশোধ করেনি। এমনকি ১২/১৩ মাসের ভাড়া বাকী পড়ায় তাদেরকে বের করে দিয়েছি। এছাড়া তাদেরকে বের করে দেয়ার পর আমাকে ও আমার স্বামীকে নানাভাবে হয়রানি করেছে তারা। এমনকি মামলা দিয়ে আমার স্বামীকে জেল খাটিয়েছে। হয়রানি আমরা হয়েছি তাদেরকে ভাড়া দিয়ে। তিনি জানান, মামলাটি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এরপরেও নানাভাবে হয়রানি করছে তারা।

তবে স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক মুছা করিম রিপন জানান, চুক্তি হওয়ার পর থেকে জয়নব খানমকে গত ৪ বছর ভাড়া দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এরপরেও সম্পূর্ণ ভবনটি নিজেরা ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে জয়নব খানম এবং তার স্বামী বিদ্যালয়টি দখল করেন।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমুশ শিহার জানান, স্কুলটি আমাদের এখান থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেই। আর এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। রেজিষ্ট্রেশন থাকলে হয়তো বিষয়টি দেখা যেত।

মেসেঞ্জার/নোমান/তুষার