ছবি: মেসেঞ্জার
টাঙ্গাইলের সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মঘন্টা নির্ধারিত হয়। সূর্য ঘড়ির সময়সূচী দেখে পিয়নের মাধ্যমে ঘন্টার বেল বাজিয়ে জানান দেওয়া হয় কর্মঘন্টা। যে ঘড়ির টিক টিক শব্দ কিংবা আওয়াজ নেই। ঘন্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের কাটার ছোটাছুটি নেই। সেই সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে ২০২৪ সালকে বিদায়ী জানিয়ে ২০২৫ সালকে বরণ করে নিবে বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিক তখন থেকেই বিদ্যালয়ের সময় নির্ধারণের জন্য সূর্য ঘড়িটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সেই আমলে কোন ঘড়ি ছিল না। তাই সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে আগমন প্রস্থান ও ক্লাসের কর্মঘন্টা নির্ধারণ করা হতো।
তাই এই ঘুড়ির মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমন প্রস্থান ও ক্লাসের কর্মঘন্টা ছবি নির্ণয় করা হয়। যে ঘড়ির কোন কাটা নেই। সূর্যের আলোকরশ্মি ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয় সময় ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সামনে বিশাল একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের দক্ষিণ পাশে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। স্কুলে ভিতর ঢুকতেই প্রথমেই সেই খেলার মাঠ। খেলার মাঠের দুপাশ দিয়ে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার রাস্তা রয়েছে। রাস্তার সামনেই পড়বে সূর্য ঘড়ি। যে ঘড়িটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজও সেই ঘড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী বহন করছে।
অষ্টম শ্রেণীর তানজিল বলেন, আমাদের স্কুলের সূর্য ঘড়িটি অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। সন্তোষ জাহ্নবীর ঐতিহ্য হচ্ছে সূর্য ঘড়ির।সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে প্রাচীন যুগের সূর্যের দিক নির্দেশনা মত কাজকর্ম করতো। ওই সময়ে প্রযুক্তিগত কোন ঘড়ি না থাকায় তখন এই সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে মানুষ একমাত্র অবলম্বন হিসাবে কাজকর্ম করতে।
তিনি জানান, ঘড়িতে যখন আলোর ছায়া পড়ে। সেই আলোর ছায়া প্রতিরোধ হিসেবে বোঝা যায় কখন কোথায় কয়টা বাজে।
তিনি আরো জানান, ঘড়িতে কয়টা বাজে স্পষ্ট আমরা না বুঝলেও স্কুলের শিক্ষকরা বুঝতে পারেন।
সবচেয়ে বড় কথা হলো সূর্য ঘড়িটি দেখার জন্য অনেক দূরদূরান্ত থেকে লোক আসে। প্রথমে এটি মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল আছে। এই কৌতূহলের কারণে মানুষ দেখার জন্য ছুটে আসে।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে যখন স্কুলে ভর্তি হই। তখনই সূর্য ঘড়িটি দেখে অবাক এবং আশ্চর্য হয়ে যাই।
এরপর শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘড়িটির সময় কিভাবে নির্ধারণ করেন সেই বিষয় জেনে নেই।
এরপর থেকে বহিরাগত যত মানুষ আসে তাদেরকে আমি সময়ের ব্যাপারে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি।
নবম শ্রেণীর সুমাইয়া আক্তার বলেন, সূর্য ঘড়িটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এই জাহ্নবী স্কুলে আসে।
তিনি জানান, সূর্য ঘড়ির পিছনে দেওয়া আছে কোন মাসে কি রকম ছায়া পড়বে। এটির জন্যই সূর্য ঘড়িটি অনেক পরিচিত।
তিনি জানান, বাংলাদেশে দুটি সূর্য ঘড়ি রয়েছে। তার মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের সূর্য ঘড়িটি অন্যতম।
সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক দুলাল রায় জানান, বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সূর্য ঘড়িটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সেই সময় প্রযুক্তিগত কোন ঘড়ি ছিলনা। যার কারণে সেই আমলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ইংরেজি শিক্ষক এই সূর্য ঘড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
এই ঘড়িটির বিশেষণ হলো ঘড়িটির কোন কাটা নেই। এটা সূর্যের আলোকরশ্মির ব্যবহার করে সময় নির্ধারণ করা হয়।
ঘড়ির দুই স্তম্ভের দুই পাশে দাগান্বিত আছে। যাহা ৮টা থেকে ১২ টা পযন্ত এক পাশে নির্ধারণ করা ও ১২ টার পর থেকে ৪ টা পর্যন্ত আরেক পাশে দাগান্বিত আছে। সূর্যের আলোকরশ্মি যখন ঘড়িতে পড়ে সেই আলোকরশ্মি ব্যবহার করে সময় নির্ধারণ করা হয়।
ঘড়িটির দু'পাশে দাগ রয়েছে প্রতিটি দাগের মান দেওয়া আছে ১৫ মিনিট করে। সেই দাগের মান হিসাব করে প্রযুক্তিগত ঘড়ির সাথে সময়টা মিলে যায়।
তিনি আরো জানান, সময়টা নির্ধারণের জন্য যদি কিছুটা হেরফের হয় তাহলে সঠিক নির্ণয়ের জন্য ঘড়িটির পিছনে ক্যালেন্ডার দেওয়া আছে। সেই ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে কোন মাসে কখন সময় যোগ বিয়োগ করতে হবে তার হিসাব সুন্দরভাবে দেওয়া আছে। সেই সময়টা যোগ এবং বিয়োগ করি তাহলে আমাদের প্রযুক্তিগত ঘড়ির সাথে হুবহু সময়টা মিলে যাবে।
তিনি জানান, সূর্য ঘড়িটি এখনো আমাদের মাঝে সংরক্ষিত করা আছে। তবে সরকারিভাবে যদি কোন অনুদান পাওয়া যেত তাহলে এই ঘড়িটি আরো সৌন্দর্যময় করে আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে এই ঘড়িটি ব্যবহার করা যেত।
টাঙ্গাইলের সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিয়া চান বলেন, ঐতিহ্যবাহী সূর্য ঘড়িটি ২০২৪ কে বিদায় জানিয়ে ২০২৫ কে স্বাগত জানাবে।
সূর্য ঘড়ির মাধ্যমে সূর্যের অবস্থান দেখে বোঝা যায় কখন কয়টা বাজে। আগের যুগে সময় দেখার মতো কোন ঘড়ি ছিল না। তাই সময়ের মানদণ্ড নির্ণয়ের জন্য এই সূর্য ঘড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেছিল তৎকালীন একজন ইংরেজি শিক্ষক।
তিনি আরো জানান, সূর্যের আলো দিয়ে নির্ধারণ করার সব কিছুই আজ বিলুপ্তি হয়ে গেছে। আমাদের টাঙ্গাইলের মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ে সূর্য ঘড়িটি ঐতিহ্য বহন করছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরিফা হক জানান, শিক্ষার্থীদের আগামী দিনে আলোকিত হক নতুন বছরের এই প্রত্যশা।ছাত্র-ছাত্রীরা পাবে তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। তারা জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করবে নিশ্চিন্তে।
এছাড়াও তিনি বলেন সূর্য ঘড়ি এমন একটি কৌশল যা সূর্যের অবস্থান নির্ণয়ের মাধ্যমে সূর্যালোকে কাজে লাগিয়ে সময় নির্ধারণ করতে হয়। বিগত দিনে সময় জানতে তেমন কোন ঘড়িই ছিল না। আগের যুগের মানুষ সূর্য ঘড়ির মত ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সময় নির্ণয় করত।
টাঙ্গাইলে এমন একটি সূর্য ঘড়ি রয়েছে যেটি আগের যুগের একটি স্মৃতি বহন করে। এই ঘড়িটি সৌন্দর্য ও সংরক্ষিত করতে আরো আধুনিকায়ন করার প্রয়োজন হলে সব ধরনের পদক্ষেপ যথাযথভাবে নেওয়া হবে।
মেসেঞ্জার/তুষার