ঢাকা,  শুক্রবার
০৩ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

টাঙ্গাইলে এক বছরে ১৫৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত

শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:৪২, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলে এক বছরে ১৫৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত

ছবি : মেসেঞ্জার

টাঙ্গাইলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন হতাহত হয়েছেন। এরমধ্যে ১৩৫ জন নিহত এবং ১৩৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকে চিকিৎসার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি ও ঋণ করে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতদের অধিকাংশ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে চলছেন। এরমধ্যে ২২ হতাহতের পরিবার সরকারি অনুদান পেতে বিআরটিএ'র ট্রাস্টি বোর্ডে আবেদন করেছেন।

টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ১৩৫ জনের মৃত্যু এবং ১৩৯ জন আহত হন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৮ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮ জন, মার্চ মাসে ২১ জন, এপ্রিল মাসে ১৩ জন, মে মাসে ৬ জন, জুন মাসে ১৯ জন, জুলাই মাসে ৮ জন, আগস্ট মাসে ৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১০ জন, অক্টোবর মাসে ১৩ জন, নভেম্বর মাসে ৬ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ১০ জন নিহত হন। অন্যদিকে, এসব দুর্ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন, মার্চ মাসে ২২ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৮ জন, জুন মাসে ১২ জন, জুলাইয়ে ১০ জন, আগস্ট মাসে ৩ জন, সেপ্টেম্বরে ১০ জন, অক্টোবরে ১৩ জন, নভেম্বরে ১ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ৯ জন আহত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর সখীপুর উপজেলায় কনকনে শীতে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। গত ১৮ ডিসেম্বর মধুপুরে পিকআপভ্যানের চাপায় রামকৃষ্ণ বাড়ি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন নিহত হন। তারা দু’জন ভোরে মসজিদে আজান ও ইমামতি করার জন্য মোটরসাইকেলে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপভ্যানের সাথে তাদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তারা নিহত হন। এদিকে একই উপজেলায় গত ২১ ডিসেম্বর আশ্রা বাজারে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংর্ঘঘে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভূঞাপুর উপজেলার ন্যাংড়া বাজারের সামনে পিকআপ ভ্যানের চাপায় গোবিন্দাসী ইউনিনের দিলীপ কুমার পালের ছেলে জয়দেব পালের দুই ভেঙে আহত হন। তিনি উপজেলার শমসের ফকির ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। দীর্ঘ তিন মাসের চিকিৎসায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করে তার পরিবার। পরে জয়দেব পাল বাড়ি ফিরলেও তার ডান পা কেটে ফেলে দিতে হয়। কালিহাতী উপজেলার কাগমারী ইছাপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে পারভেজ তালুকদার গত সেপ্টেম্বর মাসে সখীপুরের বড়চওনা এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা করতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় তার সংসারের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পাওনাদাররা টাকার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। ওই সহায়তা পেলে হয়তো কিছু দেনা পরিশোধ করতে পারবেন।

টাঙ্গাইল জেলা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ বাচ্চু জানান, পথে প্রান্তে বহু মানুষ দুঘর্টনায় মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনার পর আর কেউ ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের খবর রাখে না। দুর্ঘটনার কবলে অনেক পরিবারের উর্পাজনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যে হারে গ্রামগঞ্জে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। শহরের অলিগুলি দিয়ে তিন চাকার গাড়িগুলো সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বেড়েছে। এদের প্রতি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার নজরদারি নেই বললেই চলে। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে টহল পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে তদারকি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. তুহিন তালুকদার সড়ক দুর্ঘটনার বেশকয়েকটি কারণের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে জানান, চালকরা বেশি ট্রিপের আশায় পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের দাপট, টহল পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সঠিক তদারকি ইত্যাদি কারণে সাধারণত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, চালকদের নিরাপদ সড়ক আইন সর্ম্পকে জ্ঞান না থাকাও দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন তিনি। এসব কারণগুলোর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়ালে সড়ক দুর্ঘটনা অবশ্যই কমবে।

টাঙ্গাইল সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাও অনেকাংশে দায়ি। তারা ঘুষ খেয়ে গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স দিচ্ছে অবাধে। যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। চালকদের সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক আইন সর্ম্পকে সচেতন করা এবং যানবাহনের চালকদের ডাটাবেজ তৈরি করাও জরুরি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক শেখ মাহতাব উদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছরই ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে ২২ জন হতাহত ইতোমধ্যে আর্থিক সহায়তার জন্য ট্রাস্টি বোর্ডে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে নিহতের সংখ্যা ১৮ এবং আহত রয়েছেন ৪ জন। যথাযথ যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল জানান, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, সড়ক-মহাসড়কে স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে না জানা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাদের সচেতন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার তদারকির মাধ্যমে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মেসেঞ্জার/তুষার

আরো পড়ুন