ঢাকা,  শনিবার
১১ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

বিকেল গড়াতেই সড়ক দখল করে সাদিয়া’স কিচেন

সাখাওয়াত আলম, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

বিকেল গড়াতেই সড়ক দখল করে সাদিয়া’স কিচেন

ছবি : মেসেঞ্জার

চট্টগ্রাম নগরে ফুটপাত, সড়ক ও মহাসড়ক দখল করে চলছে নানা ব্যবসা। প্রতিটি এলাকায় বসছে শত শত টংয়ের দোকান। এতে থেমে নেই নামিদামি রেস্টুরেন্টও। সাদিয়া'স কিচেন নামে এক রেস্টুরেন্ট মহাসড়কসহ ফুটপাত দখল করে পরিবেশন করছে খাবার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশনে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণতা। অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রকৃয়াজাত করে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই রেস্টুরেন্টের নতুন এক আউটলেট ফুটপাত দখলে রেখেছে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারে। এনিয়ে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী।

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডের কালামিয়াবাজার মুখে সাদিয়া'স কিচেন নামে রেস্টুরেন্টের আউটলেট খুলেছে। 

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের পাশঘেঁষে বাকলিয়া এক্সেস রোড যুক্ত করেছে নগরের চন্দনপুরাকে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে নগরের যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ ব্যবস্থা হয়েছে এ রাস্তা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শাহ আমানত সেতু পার করে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলেই ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন নগরে প্রবেশ করে হাজারো গাড়ি। তবে নগরে প্রবেশের মুখেই নানা বাঁধা পেড়িয়ে সচেতনতার সাথে অতিক্রম করতে হচ্ছে এসব গাড়ির। সামান্যতম অসচেতনতায় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। কারণ বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রবেশের মুখে সাদিয়া'স কিচেন নামক রেস্টুরেন্টটি রাস্তা দখল করে বসিয়েছে খাবার টেবিল। এতে পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার। এসব টেবিলের পাশে রাস্তার ওপরে ১২ ফুট প্রস্থ চার ফুট উচ্চতার একটি আলমারির মত একটি স্টিলের আসবাবও রাখা রয়েছে। এ ছিল রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকেলের চিত্র।

তবে রাতের চিত্র ছিল আরও চাকচিক্যময়। রোববার রাতে দেখা যায়, তিনটি গোল টেবিলে খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি বড় একটি ব্যানার দখল করেছে রাস্তা। এ ব্যানারে দেওয়া আছে সাদিয়া’স কিচেন নামক রেস্টুরেন্টের খাবারের দাম। তবে মান হারাচ্ছে রাস্তার ধুলোবালিতে। শুধু তা নয়, রেস্টুরেন্টের সামনে সড়ক নির্দেশক “সামনে ইউ-টার্ন” ঢেকে গেছে এ রেস্টুরেন্টের অনৈতিক সড়ক দখলে। বিদ্যুতের খুঁটিও বাদ যায়নি ওই রেস্টুরেন্টের কবল থেকে। ফুটপাতের উপর রাখা হয়েছে বড় দু'টি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার।

এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা নাগাদ নগরের নতুন ব্রিজ এলাকায় ইটবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘঠিয়েছিল। গাড়িটি ফুটপাতে থাকা বিভিন্ন গাড়িকে দুমড়েমুচড়ে একটি বিরিয়ানির দোকানে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বিকাশ নামে একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ১১ জন। আহতদের কয়েকজনের প্রাণহানি সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। তবে রাস্তার বাইরে এ বিরিয়ানির দোকান ট্রাক চালকের অসাবধানতার কারণে এমন হলেও বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে সাবধানতা অবলম্বনের পরেও ঘটতে পারে এর চেয়ে মারাত্বক দুর্ঘটনা।

রাস্তা দখল করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করায় ক্ষোভ ঝাড়লেন ওই এলাকার বাসিন্দা কামরুল হোসেন। তিনি দ্যা ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, এই রাস্তা উদ্বোধনের আগেই দখল করে নিয়েছে। পুরো সড়কের ফুটপাত দখল করে রেখেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়ক দখল করে রেখেছে টংয়ের দোকান। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে এ দখলদারদের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ নেওয়ার মত করেই বাড়ছে। এ কারণে এ সড়কে যান চলাচলে বিচ্যুতির পাশাপাশি বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে।

শান্তানু বিশ্বাস বলেন, সাদিয়া’'স কিচেন বেশ কয়েকবার জরিমানা গুনতে দেখেছি পত্রিকায়। এবার তারা মহাসড়ক দখল করে নিয়েছে। তাদের এমন বেপরোয়া স্বভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকাবাসীসহ আশপাশের অন্য ব্যবসায়ীরা। প্রতিবেদককে দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার দেখিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই যে ‘বোমগুলো’ রাস্তার উপর রেখেছে। এগুলো ব্লাস্ট হলে আপনি আর আমি কারোর অস্তিত্ব থাকবে বলে মনে হয়?

তবে রাস্তা দখল করে কেন এমন ব্যবসা পরিচালনা করছেন তা জানতে চেয়ে ওই রেস্টুরেন্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মেজবাউল হক মাখন এর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এসময় তিনি নতুন আউলেটের নির্মানাধীন ভবনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। 

মেজবাউল হক মাখন বলেন, আউটলেটের সামনে রাস্তায় অটোরিক্সা ভীড় করার কারণে সামনে টেবল বসিয়েছি। যেন এসব অটোরিকশা দাঁড়াতে না পারে। নির্মানাধীন ভবনের কারণে ফুটপাতে সিলিন্ডার রাখতে হয়েছে। এসব সরিয়ে নেওয়া হবে। চলাচলের পথে বাঁধা সৃষ্টির কারণে তিনি জনগনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সড়ক, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইনে অপরাধ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্পেশাল ম্যজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন। 

মনীষা মহাজন বলেন, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে জনগনের চলাচলের পথে বাঁধা সৃষ্টি করা অপরাধ। তবে এ ধরণের অপরাধের জন্য অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এদিকে ওই রেস্টুরেন্টের ফেসবুক পেইজে স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের আস্থা রাখতে জানানো হলেও কয়েকবার অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করে দণ্ডিত হয় এই রেস্টুরেন্ট। গত ১৬ অক্টোবর ওই রেস্টুরেন্টের জামালখান আউটলেটে খাবারে অনুমোদনহীন কেমিক্যাল ব্যবহার, ফ্রিজে বাসি রান্না করা ভাত, গ্রিল এবং বিভিন্ন ধরনের রান্না ও ভাজি করা মুরগির মাংস সংরক্ষণ করায় এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর আগে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর একই আউটলেটকে ডিপ ফ্রিজে কাঁচা মাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করা খাবার খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ, মেয়াদোত্তীর্ণ দই দিয়ে লাচ্ছি বানানো ও বিভিন্ন পণ্যের গায়ে ডাবল স্টিকার লাগানোর অপরাধে ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

২০২১ সালের ১০ এপ্রিল করোনা পেনডেমিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে খাওয়ানোর অভিযোগেও জরিমানা গুনতে হয়েছিল ওই রেস্টুরেন্টের চকবাজার আউটলেটে। এছাড়া একই আউটলেটে ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কোমল পানীয় বিক্রি করায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

মেসেঞ্জার/সাখাওয়াত/এসকে/ইএইচএম