ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম আদালতের এক হাজার ৯১১টি মামলার নথি (কেস ডকেট বা সিডি) হারিয়ে যাওয়ায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়া। তবে এ ঘটনা রহস্যজনক বলে উল্লেখ করছেন আইনজীবীরা। এসব নথি অরক্ষিতভাবে রেখে হারানোর পেছনে দায়ী প্রত্যেকের শাস্তিও দাবি করেছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) নগরের কোতোয়ালি থানায় এ জিডি করা হয়।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মহানগর পিপি কার্যালয়ে ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট রক্ষিত ছিল। পিপি কার্যালয়ে জায়গা-স্বল্পতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে পিপি কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় প্লাস্টিকের বস্তায় এক হাজার ৯১১টি মামলার কেস ডকেট পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় রাখা ছিল। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির সময় অফিস বন্ধ থাকায় গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিগুলো হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি থানায় ডায়েরিভুক্ত করে রাখার জন্য আবেদন করা হলো।
পিপি মফিজুল হক ভুঁইয়া দ্যা ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, অনেকদিন ধরে ডকেটগুলো বারান্দায় পড়েছিল। আদালত অবকাশকালীন ছুটির পর নষ্ট প্রায় এসব ডকেট না দেখে থানায় জিডি করেছি। এসব আমার বাপের জিনিস না সরকারি কাগজপত্র তাই আইনী পদক্ষেপ নিয়েছি।
হারানো এসব নথির কারণে বিচারিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো ২০১৫ সালের আগের মামলার ডকেট। এসব চলমান মামলার মূল নথিও নয়। মূল নথি আমাদের কাছে আছে। চলমান মামলার নথিও আমার রুমে আছে। হারানো এসব নথির কারণে বিচারিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া যদি কোন ডকেট একান্ত জরুরী হয় তা পুনর্গঠন করা যাবে।
হত্যা, মাদক, চোরাচালান, বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন মামলার এসব নথি বিচারিক কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব নথি না থাকলে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এদিকে সদ্য বিদায়ী মহানগর পিপি আব্দুর রশিদ বলেন, আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করে অব্যাহতি নিয়েছি। তবে যে নথিগুলো হারিয়েছে তার জন্য বিচারিক প্রকৃয়ায় কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে। এছাড়া গত ১০ বছর ধরে বিচারিক কার্যক্রমের ৯৯ শতাংশ নথি বিচারিক ফাইলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইন বিভাগ। এর আগে সকল দলিল কেস ডকেটে থাকতো। তারপরও কিছুটা সমস্যা তো হবেই।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তপক্ষ ক্ষতিপূরণের জন্য মামলাগুলো করেছেন। যেসকল নথি হারানো গিয়েছে সবই দায়রা মামলার নথি। এসব নথির জন্য সরকারি বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার ইফিসিয়েন্ট অফিসার শ্রম দিয়েছেন। রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি মামলার পেছনে বিশাল কর্মযজ্ঞ রয়েছে। তার ফলাফল হচ্ছে এই কেস ডকেট। বিশেষ করে পুলিশ কেস এর জন্য এটি অপরিহার্য অঙ্গ।
কেস ডকেট হারিয়ে যাওয়াকে রহস্যজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নথিগুলো হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা হতবাক এবং বিস্মিত হয়েছি। এটি রহস্যে ভরা। এত বড় বল্ডিংয়ে এসব অপরিহার্য দলিল রাখার জায়গা হয়নি কেন? কেন বারান্দায় ছিল এসব কাগজপত্র? আদালত প্রাঙ্গণের কর্মরতরা ভাবছেন এটি ষড়যন্ত্র।
কিছু লোককে বিভিন্ন মামলা থেকে পার পাইয়ে দিতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সন্দেহপোষণ করে আখতার কবির চৌধুরী বলেন, কয়েকটি মামলার কেস ডকেট সরালে ষড়যন্ত্র বোঝা যেত। কিন্তু এ কয়েকটি মামলার জন্যই সব কেস ডকেট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেন কোন সন্দেহ না বাড়ে। তবে সবচেয়ে বড় অন্যায় হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রাখা। অরক্ষিত অবস্থায় নথিগুলো রাখার পেছনে কোন রহস্য আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে যারা যেভাবে দায়ী বা যাদের অবহেলায় এই কর্মকাণ্ড ঘটেছে সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এমন চলতে থাকলে আইনের শাসন বলতে কিছুই থাকবে না।
এদিকে সিনিয়র আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেস ডকেট হারিয়ে যাওয়া অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। এসব মামলা চলমান আছে কি না তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। আবার অনেক সময় মামলা নিষ্পত্তির পরেও আপিল করতে চান বিচারপ্রার্থীরা। এসময় এসকল ডকেটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে প্রত্যেকটি ডকেটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটি একটি নেক্কার জনক ঘটনা।
জানা গেছে, আদালত ভবনে রঙের কাজ করা হয়েছে। এসময় এসব নথি সরানো হতে পারে। এছাড়া দেড় বছর ধরে এসব নথি আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় পড়ে ছিল। এতে লেখা ছিল, পিপির গুরুত্বপূর্ণ নথি, এখানে হাত দেওয়া নিষেধ।
মেসেঞ্জার/তুষার