ঢাকা,  বুধবার
০৮ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

ফুলবাড়ী সীমান্তে ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ১৪ বছরপূর্তি কাল, হত্যার বিচারসহ কোনো দাবিই পূরণ হয়নি পরিবারের

ইউনুছ আলী আনন্দ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

ফুলবাড়ী সীমান্তে ফেলানী হত্যা ট্র্যাজেডির ১৪ বছরপূর্তি কাল, হত্যার বিচারসহ কোনো দাবিই পূরণ হয়নি পরিবারের

ছবি : সংগৃহীত

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি)কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক আলোচিত কিশোরী ফেলানী হত্যা ট্রাজেডির ১৪ বছরপূর্তি।

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ফেলানীর রুহের মাগফেরাতে মঙ্গলবার বাদ যোহর ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর উপজেলার দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী জামে মসজিদে আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের।

এখানে উপস্থিত থাকবেন ফেলানীর ছোট ভাইরাসহ তার স্বজনরা। ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অয়োজিত ফেলানী দিবসের অনুষ্ঠানে ঢাকায় উপস্থিত থাকবেন বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম।

জানা গেছে, ২০১১ ইং সালের ৭ জানুয়ারি কুয়াশাছন্ন শীতের এই দিনে ভারতের আসাম রাজ্যের বনগাইগাঁও এলাকা থেকে পিতা নুর ইসলামসহ কিশোরী ফেলানী ভারতীয় দালালের মাধ্যমে নিজ বাড়ি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে।

ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তের ৯৪৭/৩এস আন্তর্জাতিক পিলারের পাশে ভারতীয় খেতাবেরকুটি সীমান্তে চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ ফেলানীকে আটক করে। পরে পাশে থাকা একটি শরষে ক্ষেতে অভিযুক্ত বিএসএফ অমিয় ঘোষসহ অন্য বিএসএফরা ফেলানীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

এ নির্যাতনে কিশোরী ফেলানী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরবর্তীতে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করে তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখে। বিএসএফ হায়েনারা ফেলানীকে হত্যা করার পর ফেলানীর মৃত দেহকে দীর্ঘ সময় কাঁটা তারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখে।

ফেলানী হত্যার এই নির্মম ঝুলন্ত ছবি ও খবর দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রকাশ হলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে ফেলানী, ঝুঁলছে বাংলাদেশ র্শীষক প্রতিবাদী স্লোগান ও ফেলানীর ঝুলন্ত ছবি গোটা জাতির বিবেকে নাড়া দেয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হলে টনক নড়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফেলানী হত্যার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় ভারতকে।

তৎকালীন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বিজিবির মহাপরিচালক আব্দুল আজিজসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা ছুটে আসে ফেলানীর নিভৃত পল্লীতে।

ফেলানীর উপর বিএসএফের এই নির্যাতন ও নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিশ্ব আলোচিত হয়। দাবি ওঠে বিএসএফের বিচারের। বিজিবির দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়।

ফেলানীর বাবা দু’দফা বিএসএফের আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে আসলেও ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। রায় পুনবিবেচনার বিজিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচারে আবারও অমিয় ঘোষ খালাস দেয় বিশেষ আদালত।

ন্যায় বিচারের আশায় সর্বশেষ ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবি অপর্নাভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দাখিল করে।

ওই সালে ভারতের আইন ও সালিস কেন্দ্রে ও মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চে ফেলানী হত্যার ক্ষতিপুরণ মামলা দায়ের হলেও মামলাটির শুনানী ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দফায় দফায় শুনানী পেছায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মামলাটির শুনানীর তারিখ নির্ধারিত হলেও আজও তার শুনানী হয়নি।

ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের সাবেক পাবলিক প্রসিউকিটর ও একুশে ও স্বাধিনতা পদকে ভূষিত এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন।

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম জানান, আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার আ্জ ১৪ বছর পার হচ্ছে। আমি বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার না পেয়ে ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবি অপর্নাভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দাখিল করি।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রীট গ্রহণ করে। আমি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার পাবার আশায় অপেক্ষায় আছি অথচ বিচার পাচ্ছিনা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমার ফেলানী হত্যার তেমন সহযোগিতা করেনি।

ওই সরকার ভারত সরকারের কাছে ফেলানী হত্যার ক্ষতিপূরণও নিতে পারেনি। বর্তমান ছাত্র জনতার গণ অভ্যুথথানের সরকার আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার মামলা আবার উপস্থান করে ফেলানী হত্যার অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিচার নিশ্চিত করবে বলে এই দাবি রাখছি।

নুর ইসলাম আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেকে আমার মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ফেলানীর নামে ফেলানী মোড় থেকে আমার বাড়ির সামনের ৩ কি.মি কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণসহ রাস্তার নামকরণ ফেলানী সড়ক করার আশ্বাস দিলেও দীর্ঘ ১৪ বছরে কেউ কথা রাখেনি।

আমি ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবী সরকারের কাছে ফেলানী মোড় থেকে আমার বাড়ির সামনের ৩ কি.মি কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণসহ রাস্তার নামকরণ ফেলানী সড়ক দাবি করছি। এ সময় ফেলানীর পিতা তার হাইস্কুল পড়ুয়া, কলেজ পড়ুয়া ও অনার্স পড়ুয়া ৫ ছেলে মেয়ের সরকারি চাকুরীর সুযোগ দেয়ারও দাবি করেন।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, আমার মেয়ে ফেলানীকে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। ফেলানী হত্যার আজ ১৪ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার পেলাম না। তিনি তার মেয়ে ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফের বিচার দাবি জানান। হত্যাকারীর ফাঁসি হলে ফেলানী তার আত্মার শান্তি পাবে।

জাহানারা বেগম আরও জানান, আমার মেয়ে ফেলানীর বিচার হলে বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলি হতো না। আমার মতো বাংলাদেশী কোনো মায়ের বুক খালি হতো না। জাহানারা বেগম এ সময় বর্তমান ড. ইউনুস সরকারের কাছে তার বাড়ির পাশের ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ ও রাস্তাটির নাম ফেলানী সড়ক নামকরণের দাবি জানান।

মেসেঞ্জার/তুষার

আরো পড়ুন