ঢাকা,  মঙ্গলবার
২১ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

কালাইয়ে শীতবস্ত্র নিয়ে শীতার্তদের পাশে মানবিক ইউএনও শামিমা আক্তার জাহান

রাব্বিউল হাসান রমি, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

কালাইয়ে শীতবস্ত্র নিয়ে শীতার্তদের পাশে মানবিক ইউএনও শামিমা আক্তার জাহান

ছবি : মেসেঞ্জার

ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসের কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। প্রতিদিনই কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। ঠাণ্ডা বাতাসের দাপট, ঘণ কুয়াশা আর শিশির মিলে শীত জেঁকে ধরেছে সবাইকে। হিম শীতল শীতের এই তীব্রতা বেশি কাবু করে বসেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। আর এ শীতের তীব্রতায় যখন দুস্থ, অসহায়, ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ, দিনভর হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে বাড়ায় শীতের তীব্রতা।

ঠিক তখনই জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান। তার এ মানবিক উদ্যােগে উপজেলার ৪ হাজার ৩০০ জন দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্ররা শীত নিবারণের জন্য পেলেন শীতবস্ত্র (কম্বল)।

স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতার্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবে রাতের অন্ধকারে নিজেই ছুটে যান মানবিক ইউএনও তাদের পাশে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে অসহায় মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন তিনি। কখনো বা হাজির হচ্ছেন কোন ইউনিয়ন পরিষদে সেখানে দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করছেন কম্বল। আবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নিজ হাতে বিভিন্ন এতিম খানা, লিল্লাহ বোডিং, হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বিতরণ করছেন কম্বল।

প্রায় সপ্তাহ ধরে এভাবে ছিন্নমূল, অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান। কনকনে শীতের রাতে হঠাৎ যখন ইউএনও হাতে শীতবস্ত্র তা দেখে ছিন্নমূল দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

কম্বল পেয়ে কোহিনূর বেগম বলেন, শীতের জন্য রাতে ভালো ঘুম হয়না। মনে অইছিল এই শীতে আর বাচুম না। ইউএনও স্যারের কম্বল পাইয়া শীতের ডর কাইট্যা গেছে।

কম্বল পাওয়ার পর বিধবা তাহেরা বেওয়া বলেন, ঘরে ভালো কোনো কম্বল ছিল না, যা দিয়া শীত ঠেকামু। এবার ইউএনও স্যারের দেওয়া এই কম্বল গায়ে দিয়া এইবার শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু।

কম্বল হাতে পেয়ে খুশি হামিদা বেগম। তিনি বলেন, রাতে কুয়াশা বেশি হয়, আবার কম হয়। যখন হালকা বাতাস হয়, তখন ঠাণ্ডা লাগে। চাদর, শাড়ি বা অন্য কোনো কাপড় গায়ে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। এই কম্বল পাওয়ার পর এটি গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমাতে পারবো।

কম্বল পাওয়ার পর আব্দুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। ঠান্ডায় এই শীতের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। খুব ঠান্ডা লাগে। চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়ি। এখন এই কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে পারবো।

শীতবস্ত্র পেয়ে আরও কয়েকজন শীতার্ত বলেন, আমরা দরিদ্র, অসহায় মানুষ। শীতের জন্য রাতে ঠান্ডা লাগে ঘুমাতে কষ্ট হয়। ইউএনও স্যারের এই কম্বল পেয়ে আমাদের অনেক উপকার হলো।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, শীতে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষদের অনেক কষ্ট হয়। তাদের অনেকের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। তাদের শীত নিবারণের কোনো ভালো ব্যবস্থা থাকে না। এজন্য উপজেলায় এবার ৪ হাজার ৩০০ জন অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্রদের তালিকা করা হয়েছে। অধিকাংশ কম্বল এসব মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে আর কিছু বিতরণ এখনো চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ৪ হাজার ৩০০ জন মানুষের তালিকা প্রস্তুত করতে উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী, পৌরসভার সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী, ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিবৃন্দ সহায়তা করেছেন।

মেসেঞ্জার/তুষার