ঢাকা,  বুধবার
০৮ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে পালন হলো ফেলানী হত্যা ট্রাজেডির ১৪ বছর

ইউনুছ আলী আনন্দ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে পালন হলো ফেলানী হত্যা ট্রাজেডির ১৪ বছর

ছবি : মেসেঞ্জার

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক আলোচিত কিশোরী ফেলানী হত্যা ট্রাজেডির ১৪ বছরপূর্তীতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে পালন করেছে ফেলানী পরিবারের সদস্যরা।

ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ফেলানীর রুহের মাগফেরাতে মঙ্গলবার বাদ যোহর ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর উপজেলার দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী জামে মসজিদে আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের।

এখানে উপস্থিত ছিলেন ফেলানীর ছোট ভাই আরফান আলী, আক্কাছ আলীসহ তার স্বজন ও এলাকাবাসী। ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অয়োজিত ফেলানী দিবসের অনুষ্ঠানে ঢাকায় ছিলেন। মিলাদ ও দোয়া পরিচলানা করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মামুনুল ইসলাম।

ফেলানীর ছোটভাই আরফান হোসেন জানান, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও আমরা প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি বিএসএফ কর্তৃক বড় বোন ফেলানী হত্যা ট্রাজেডির দিনটি পালন করি। এবারও মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে পালন করলাম।

এ সময় আরফান আলী তার বোন হত্যার বিচার দাবি তুলে ধরে বলেন, আমার বোন ফেলানী হত্যার বিচার দাবি গোটা বাংলাদেশবাসীর। ফেলানীর হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো বাংলাদেশীকে হত্যা করতে পারতোনা বিএসএফ। সীমান্ত সুরক্ষিত থাকতো।

আরফান আলী তার বোন ফেলানীর হত্যার বিচার কার্যক্রম চালানোর জন্য বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান। এ সময় আরফান আলী তিনিসহ তার বোন মালেকা বেগম, কাজলী খাতুন ভাই জাহান উদ্দিন ও আক্কাছ আলীকে সরকারি চাকুরীতে যোগদানের সুযোগ দাবি করেন।

আরফান আলী জানান, আমরা ৫ ভাইবোন সবাই চাকুরী পাওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছি। সরকারি চাকুরী পেলে আমাদের অভাবের সংসারের দুঃখ ঘুচবে। আরফান আলী সেনা সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন বলেও জানান।

উল্লেখ্য, ২০১১ ইং সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের আসাম রাজ্যের বনগাইগাঁও এলাকা থেকে পিতা নুর ইসলামসহ কিশোরী ফেলানী ভারতীয় দালালের মাধ্যমে নিজ বাড়ি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে। তার ৯ জানুয়ারি  আপন খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

৭ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তের ৯৪৭/৩এস আন্তর্জাতিক পিলারের পাশে ভারতীয় খেতাবেরকুটি সীমান্তে চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ ফেলানীকে আটক করে। পরে পাশে থাকা একটি শরষে ক্ষেতে অভিযুক্ত বিএসএফ অমিয় ঘোষসহ অন্য বিএসএফরা ফেলানীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

এ নির্যাতনে কিশোরী ফেলানী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরবর্তীতে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করে তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখে। বিএসএফ হায়েনারা ফেলানীকে হত্যা করার পর ফেলানীর মৃত দেহকে দীর্ঘ সময় কাঁটা তারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখে।

ফেলানী হত্যার এই নির্মম ঝুলন্ত ছবি ও খবর দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রকাশ হলে দেশে-বিদেশে শুরু হয় বিএসএফের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে ফেলানী, ঝুঁলছে বাংলাদেশ র্শীষক প্রতিবাদী স্লোগান ও ফেলানীর ঝুলন্ত ছবি গোটা জাতির বিবেকে নাড়া দেয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হলে টনক নড়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফেলানী হত্যার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় ভারতকে।

তৎকালীন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বিজিবির মহাপরিচালক আব্দুল আজিজসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা ছুটে আসে ফেলানীর নিভৃত পল্লীতে।

ফেলানীর উপর বিএসএফের এই নির্যাতন ও নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিশ্ব আলোচিত হয়। দাবি ওঠে বিএসএফের বিচারের। বিজিবির দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়।

ফেলানীর বাবা দু’দফা বিএসএফের আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে আসলেও ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। রায় পুনবিবেচনার বিজিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচারে আবারও অমিয় ঘোষ খালাস দেয় বিশেষ আদালত।

ন্যায় বিচারের আশায় সর্বশেষ ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবি অপর্নাভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দাখিল করে।

ওই সালে ভারতের আইন ও সালিস কেন্দ্রে ও মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চে ফেলানী হত্যার ক্ষতিপুরণ মামলা দায়ের হলেও মামলাটির শুনানী ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দফায় দফায় শুনানী পেছায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মামলাটির শুনানীর তারিখ নির্ধারিত হলেও আজও তার শুনানী হয়নি।