ঢাকা,  বুধবার
০৮ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

স্থায়ী বন্দোবস্তের দাবিতে বৃহত্তর কুতুবদিয়া পাড়াবাসীর মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

স্থায়ী বন্দোবস্তের দাবিতে বৃহত্তর কুতুবদিয়া পাড়াবাসীর মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ছবি : মেসেঞ্জার

''চায়না তারা ফ্লাটঘর, বাঁচুক তাদের কুড়েঘর'' এ শ্লোগানকে ধারণ করে তথা উচ্ছেদ পরিকল্পনা বাতিল করে স্থায়ী বন্দোবস্তের দাবিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের অর্ধ লক্ষাধিক জনসাধারণ। মানববন্ধনে উপস্থিত ১০ হাজারোধিক বিক্ষুব্ধ জনতার দাবি, ১৯৮১ সাল হতে এ এলাকায় কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতার বাড়ির ভাঙনকবলিত উপকূলীয় এলাকার বাস্তহারা লোকজন মাথা গুজার ঠাঁই করে নিয়েছে।

বিশেষত ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে বিশাল জনগোষ্ঠী বিটা মাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়লে ওই জনগোষ্ঠীকে এ এলাকায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক বসতি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করলে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে বিশাল অসহায় - নদী ভাঙনকবলিত জনসাধারণের বসবাস। এখানে বর্তমানে ১২ হাজার পরিবারের ৫০ হাজারোধিক মানুষ বসবাস করছে।

বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য ২০০৭ সালে একবার উচ্ছেদ করা হয়। সর্বশেষ বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য ৩শ ফুট জায়গার চাহিদার পরিপ্রেরক্ষিতে কতৃপক্ষ কাজ সম্পন্নকরণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কেনো প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীকে উচ্ছেদ আতংকে থাকতে হচ্ছে এ প্রশ্ন তাদের।

বিগত সরকার প্রয়োজন না হলেও ৬৮২ একর জায়গা বিমানবন্দরকে লীজ দিয়ে ওই এলাকার অবহেলিত জনসাধারণকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। জাতীয় স্বার্থে যতোটুকু জায়গা প্রয়োজন ততোটুক নিয়ে এলাকার জনসাধারণকে ওই এলাকায় বসবাস করার ব্যবস্থা করার দাবি জানান সরকারের নিকট।

ইতোপূর্বে দেয়া বিগত সরকারের ওই লীজ বাতিল করে ৪৪ বছরে বসবাসরত এলাকাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বতি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন ১নং ওয়ার্ডবাসি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, সাবেক প্যানেল মেয়র জিসান উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ ও এম আকতার কামাল আজাদ, শিক্ষাবীদ এম এজাবতুল্লাহ কুতুবী, ওয়ার্ড বিএনপির পুর্ব-পশ্চিম শাখার সভাপতি আবুল বশর বহদ্দার ও ছাবের আহমদ, ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি মাও. ফোরকানুর রশিদ, ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি নুর উদ্দিন কোং ও শফিউল আলম, ওয়ার্ড জামায়াত সেক্রেটারি কলিম উল্লাহ, আতিকুল্লাহ কোং, জেলা যুবদল নেতা দিদারুল ইসলাম রুবেল ও মা. নুরুল হাশেম ও জাহেদুল ইসলাম।

স্মারকলিপি প্রদানকালে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিরা আরো জানান, বৃহত্তর কুতুবদিয়া পাড়া-নাজিরারাটেক-সমিতি পাড়ায় গড়ে উঠেছে ২২ মহল্লা। নাজিরারটেক শুটকি পল্লী দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম শুটকি পল্লী। প্রতিবছর অর্ধ হাজার কোটি টাকার শুটকি রপ্তানি হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

এছাড়া এ শুটকি পল্লী থেকে দেশের মৎস্য - মুরগির খাদ্যের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। অর্ধ লক্ষাধিক জনসাধারণের বসবাসে ২২ টি মহল্লায় এ ওয়ার্ডে রয়েছে ৪ টি মাধ্যমিক স্কুল, ৪ টি দাখিল মাদরাসা, ১১ টি প্রাথমিক ও এবতেদায়ী মাদরাসা, ৮ টি হিফয মাদরাসা, ৪ টি নুরানী মাদরাসা,১ টি কওমি মাদরাসা, ২৪ টি মসজিদ ও কবরস্থান, ৩০ টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, সরকারি  নিবন্ধিত ১২ সমবায় সমিতি, ৯ টি মাছ বাজার - কাঁচা বাজার, ৩ টি এজেন্ট ব্যাংকের শাখা ও ১ টি মন্দির রয়েছে।

পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্ডে ৪৪ বছর যাবত বসতি রয়েছে বৃহত্তর কুতুবদিয়া পাড়া-সমিতি পাড়ার জনসাধারণের।

বাসস্থান-কবরস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী হিসেবে সবদিক বিবেচনা করে এলাবাসিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য দাবি জানান বৃহত্তর কুতুবদিয়া পাড়াবাসী।

মেসেঞ্জার/তুষার