ছবি : মেসেঞ্জার
সন্ধ্যার পড়েই মুরগীর মাংস ও চিকন চাউল দিয়ে রান্না করা হয় ভুনা খিচুরী। রান্না শেষ হলে গামলার ভিতরে তোলা হয় খিচুরি। পরে মাথায় লাল রঙের গামলা, হাতে পলিথিনের পাকেট নিয়ে দুই বন্ধু রাতে সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ছুটে চলেন।
প্রথমে দেখলে মনে হবে ফেরি করে খাবার বিক্রি করছেন তারা, কিন্তু তা নয় রাস্তায় বেওয়ারিশ ৭০/৮০টি ক্ষুধার্ত কুকুরদের প্রতি শুক্র ও শনিবার খাবার বিলিয়ে বেড়ান তারা। রাতে এই খাবার পেয়ে মহাখুশি কুকুরগুলো লেজ নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করে আর পেট পুরে খায়। মুলত বেওয়ারিশ কুকর ও বিড়ালদের প্রতি তাদের এক অন্য রকম মায়া ও ভালোবাসারই বিহঃপ্রকাশ এটি।
সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত গুড ফুড রেস্তোরার মালিক সালেকুজ্জামান বাবু ও তার বন্ধু বণী আমিন ভুনা খিচুরি রান্না করে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালদের খাওয়ান। দুই বন্ধুর এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সব প্রাণীর প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। এই ইতিবাচক কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তাদের এই মহতি কাজকে ধন্যবাদ জানাই।
মানবিক যুবক বণী আমিন বলেন, বর্তমানে ডাস্টবিনে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়াল। একারণে আমরা মুরগীর মাংস ও চিকন চাউল দিয়ে খিচুরী রান্না করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। অসহায় বোবা প্রাণীগুলোদের সকলেই খাবার দিলে তারা পেট ভরে খেয়ে বাঁচতে পারে। এজন্য আমাদের মতো সকলেই এই বোবা প্রাণীদের খাওয়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
গুড ফুড রেস্তোরাঁর মালিক সালেকুজ্জামান বাবু বলেন, এটা আত্মতৃপ্তি থেকে কাজগুলো করছি। কারণ মানুষ ক্ষুধা লাগলে বলতে পারে। কিন্তু কুকুর হলো বোবা প্রাণী। ক্ষুধা লাগলে তারা মুখফুটে বলতে পারে না। এজন্য আমরা নিজে থেকেই এই উদ্যোগে নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমার রেস্তোরার খাবার বেচে গেলে সেই খাবারগুলো ক্ষুর্ধাত কুকুর ও বিড়ালদের প্রতিনিয়তই দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিশেষ দিনই না। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার আমরা রান্না করে শহরের অলিগলিতে ঘুড়ে বেওয়ারিশ ক্ষুধার্ত কুকুরদের খাবার দেয়। এতে আমাদের ভালো লাগে।
লোয়ার ডিভিশন এ্যাসিসটেন্ট, নেসকো লিমিটেডের কর্মচারী নাজমুন্নাহার পায়েল বলেন, আমি নিজেই বাসায় বিড়াল পালন করি। তাই রাস্তায় ক্ষুর্ধাত কুকুর বিড়াল দেখলে আমার মায়া লাগে। এজন্য আমি অফিসে যাওয়ার সময় ও বাসায় ফেরার সময় ওদেরকে বিস্কুট ও পারুটি খাইতে দেই। এজন সবাই আমাকে কুকুর ও বিড়ালের মা বলে ডাকে।
এদিকে, সময় টিভির সিরাজগঞ্জের ক্যামেরাম্যান অমর্ত্য সেন বলেন, জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কুকুরকে খাওয়া ও সেবা করলে শনিদেব খুশি থাকেন। যাঁদের শনি অশুভ অবস্থানে আছে বা যাঁদের শনির মহাদশা রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই প্রতিদিন কুকুরকে খাবার খাওয়ানো উচিত। কুকুরের সেবা করলেও শনি গ্রহের কারণে সৃষ্ট ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য আমি ও আমার বন্ধু ইমরান শেখ প্রতিদিন ৫০ টাকা দিয়ে বিস্কুট ও পারুটি খাওয়াচ্ছি।
অমর্ত্য সেন আরও বলেন, নানা অসুবিধার কারণে অনেকেই বাড়িতে কুকুর রাখতে পারেন না। বাড়িতে যদি কুকুর রাখতে না চান, তাহলে আমাদের মতো রাস্তার কুকুরকে রুটি খাওয়াতে পারেন। বোবা প্রাণীদের ভালোবাসার জন্য সকলেই এগিয়ে আসেন।
সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, কুকুর আমাদের পরিবেশের কাজ করে থাকে। কাজেই কুকুর ও বিড়ালসহ যেকোন পশুই হোক না কেন সকল পশু-পাখির প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এরা পরিবেশ বান্ধব কাজ করে। কুকুর-বিড়াল ময়লা আর্বজনা খেয়ে পরিবেশ দুশন রাখে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. কে. এম আনোয়ারুল হক বলেন, বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়াল আছে তাদের আমরা বিভিন্ন সময়সহ বিভিন্ন দিবসে সবাই এগিয়ে এসে তাদের খাওয়ায় তাহলে আমাদের একটি সেবা হয়। এজন্য সবাই এই অবলা প্রাণীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি।
মেসেঞ্জার/রাসেল/তারেক