ঢাকা,  শুক্রবার
১০ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

আশুলিয়ায় চাঁদা না পেয়ে দোকানীকে গুলি করলো যুবলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার (ঢাকা)

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

আশুলিয়ায় চাঁদা না পেয়ে দোকানীকে গুলি করলো যুবলীগ নেতা

ছবি : মেসেঞ্জার

ঢাকার আশুলিয়ায় চাঁদা না পেয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে সৈনিক ইসলাম শাহিন (২৬) নামে এক চা দোকানিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করেছে এক যুবলীগ নেতা। ঘটনার পর অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে। আহত শাহীনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের গোরাট ফুলবাগান এলাকায় এ গুলির ঘটনা ঘটে।

আহত সৈনিক ইসলাম শাহীন নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার লাউতলা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে। সে গোরাট এলাকায় তার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে চায়ের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

অভিযুক্তরা হলেন- ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের সোহরাব হোসেনের ছেলে আশিক, আশিকের সহযোগী কানা সজিব, তৈয়ব ও পারভেজ। তারা সবাই গোরাট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আশিক ও তার সহযোগীদের আটক করতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবলীগ নেতা আশিক ও চা দোকানী শাহীনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় শাহীনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন আশিক। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহীনকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন।

গুলিবিদ্ধ সৈনিক ইসলাম শাহীন অভিযোগ করে বলেন, আমি ডেবনিয়ার গার্মেন্টসের সামনে ফুটপাতে আমার মাকে নিয়ে দোকানদারি করি। আমার কাছে এর আগে আশিক, কানা সজিব, তৈয়ব ও পারভেজ চাঁদা দাবি করে আসছিলো। এতে আমি রাজি হইনি। এরপরে আমি সিগারেট আনার জন্য ফুলবাগান এলাকায় গেলে তারা আমাকে একা পেয়ে ধাওয়া দেয়। পরে আমি দৌড় দিলে তৈয়ব পরপর ৩টি গুলি করে। ২টি গুলি শরীরে লাগে নাই। তৃতীয় গুলিটি আমার বাম পায়ে লাগে। পরে আমি রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড় দিয়ে একটি ভবনের ৩ তলায় রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ি এবং ভিতর থেকে দরজা আটকে দেই। পরক্ষণে সেখানে তারা গিয়ে দড়জা ভাঙার চেষ্টা করে। এরপরে আমার জীবন বাঁচাতে ওই ভবনের ৩ তলা থেকে লাফ দিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে লোকজনে ধরাধরি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।

গুলিবিদ্ধ শাহীনের মা নাজমা বেগম জানান, স্থানীয় যুবলীগের লোক আকাশ, আসিক, সজীব, পারভেজ ও তৈয়বসহ অজ্ঞাননামা সন্ত্রাসীরা পোশাক কারখানার সামনের প্রত্যেক দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিলো। চাঁদা না দিলে দোকানদারদের বেদম মারধর করে তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আকাশ, আশিক, তৈয়ব ও পারভেজ প্রত্যেক দোকান থেকে চাঁদা আদায় করছিল। এ সময় সৈনিক ইসলাম চায়ের দোকানে চা বিক্রি করছিল। চাঁদাবাজরা প্রতিদিনের মতো সৈনিক ইসলামের কাছে ৫০ টাকা চাঁদা চাইলে সে টাকা দিতে অস্বীকার করে। এতে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়। পরে আমার ছেলে ফুলবাগান এলাকায় সিগারেট আনার জন্য গেলে তারা তাকে ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে সে ছুটে দৌড় দিলে তৈয়ব নামের এক সন্ত্রাসী তাকে পিছন থেকে গুলি করে। এ গুলিতে  সৈনিক ইসলামের বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয়রা থানায় সংবাদ দিলে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ব্যাপারে নারী ও শিশু হাসপাতলের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, গুলিবিদ্ধ সৈনিক ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুলি বের করার জন্য ঢাকার হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, গুলিবিদ্ধ চা দোকানী সৈনিক ইসলামকে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশী অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেসেঞ্জার/নোমান/তুষার