ছবি : মেসেঞ্জার
বর্বর নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী ছুটে আসেন মিলনমেলা অনুষ্ঠানে। এদের মধ্যে কারো পা নেই, কেউ ক্র্যাচে ভর করে ঘুরছেন। কেউ বছরের পর বছর ছিলেন পরিবার পরিজন ছাড়া। আবার কেউ মামলায় জর্জারিত হয়ে দীর্ঘদিন থেকেছেন জেলহাজতে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ সংগ্রামে নিপীড়িত জনতা ও স্বজনদের নিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি ) জেস গার্ডেন পার্কে যশোর উপজেলা বিএনপি এই মিলনমেলার আয়োজন করে। উন্মক্ত পরিবেশে খাওয়া দাওয়া আড্ডা কুশল বিনিময় আর স্মৃতিচারণ করেন তারা। ভয়ংকর সেইসব দিনের কথা বলতে বলতে অনেকেই ভেঙে পড়েন কান্নায়।
একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে প্লাসিক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন ইউনুচ আলী ওরপে তারা বাবু। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত চল্লিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তির পাশে পড়ে রয়েছে দুটি স্ক্যাচ। স্ক্যাচে ভর দিয়ে তিনি এসেছেন মিলনমেলায়। সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক তারা বাবু বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী পুলিশ। এরপর অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে পায়ে গুলি করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসায় একটি পা কেটে ফেলতে হয় তার। এরপর অস্ত্র, নাশকতার মামলার আসামি করে আদালতে পাঠালে তাকে কারাগারে পাঠায় বিচারক। তিনি বলেন, দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগ করে বাড়ি ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড না করলেও শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে বিগত সরকারের পুলিশ আমাকে পঙ্গু করেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন সদরের লেবুতলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হায়দার আলী। পরে পুলিশ স্থানীয় বাজার থেকে তুলে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নাশকতা মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাভোগের পর বাড়ি ফিরলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে লাগাতার হামলা মামলার জর্জারিত হন তিনি। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ কোন লোকসমাগম অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেনি পুলিশি আটকের ভয়ে। এখন উন্মক্ত পরিবেশে এমন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুশি লাগছে।
শুধু এই দুইজন নন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ভিন্নমতের কারণে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যশোরে এমন হাজার হাজার মানুষ। বছরের পর বছর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের চিহ্ন এখনও তারা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। বিগত সরকারের সময়ে নির্যাতিত নিপড়ীনের শিকার হওয়া এমন তিন সহ্রাধিক বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে রবিবার দিনভর ব্যতিক্রম এমন মিলনমেলার আয়োজন করেন যশোর সদর ও নগর বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সম্মান জানাতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সদর উপজেলা ও নগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন। অনেকে মিথ্যা মামলায় জেলে গেছেন। আবার অনেকে শহিদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনে করে, ফ্যাসিবাদের পতনের শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমরা বারংবারই সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আহবান জানিয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়েছে। তাই শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রপ্রতিনিধি, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্মান জানানোর জন্য আজকের মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
মিলনমেলায় যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, সদস্য সচিব অ্যাড, সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, আহবায়ক কমিটির সদস্য ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌরসভার মেয়র মারুফুল ইসলাম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক তানভিরুল ইসলাম সোহান, যুগ্ম সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঞ্জারুল হক খোকন, জেলা স্বেচাছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪ টার পর।
মেসেঞ্জার/তুষার