ঢাকা,  সোমবার
১৩ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

ফরিদপুরে চোখ উপড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের নামে মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

ফরিদপুরে চোখ উপড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের নামে মামলা

ছবি : মেসেঞ্জার

ফরিদপুরের কানাইপুরে ওবায়দুর খান (২৮) নামের এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে তুলে নিয়ে চোখ উপড়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ভাইসহ মোট ৩০ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মামলা দায়ের হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান।

ওসি মো. আসাদউজ্জামান জানান, নিহতের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে খায়রুজ্জামান খাজাকে ১ নম্বর আসামী ও তার ভাই কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেনসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। অভিযোগপত্রে অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামী করা হয়।

তিনি আরো জানান, আসামীদের ধরতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

এর আগে হত্যার মূল আসামীসহ সবাইকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে শনিবার বিকেলে লাশ নিয়ে কানাইপুর বাজার এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।

গত শুক্রবার বিকালে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কানাইপুর বিসিক শিল্পনগরীর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে যায় ওবায়দুর। সেসময় ওবায়দুর খানকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই খায়রুজ্জামান খাজার বিরুদ্ধে। এ সময় তার দুই চোখে খোঁচানো হয় এবং পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়। পরে রাত ৯ টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।

নিহত ওবায়দুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছোট ছেলে এবং পেশায় কৃষি ও কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন। তার পাঁচ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

পরিবার ও স্বজনরা জানান, ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কানাইপুর বিসিক শিল্পনগরীর মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটরসাইকেলের তেল কিনতে যায় ওবায়দুর। পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকারে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় খায়রুজ্জামান খাজার নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ফরিদপুর জুট ফাইবার্স মিলের পেছনে খাজার বাড়ির পাশে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয় ওবায়দুরকে। এ সময় তার দুই চোখে লোহার পেরেক দিয়ে খোঁচানো হয় এবং বাম পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। রাতে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যায় ওবায়দুর।

তবে নিহতের বড় ভাই রাজীব খান জানান, বিভিন্ন সময় খাজার খারাপ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাতো ওবায়দুর। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাজা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নামে এলাকায় খাজা বাহিনী গড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রহমানের ছত্রছায়ায় ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে আব্দুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী থেকে খালাস পান খাজা। পরে এলাকায় ফিরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ৫ আগস্টের পরে জেলা বিএনপির এক নেতার সমর্থক পরিচয়ে পুনরায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন। তার দলে না ভিড়লে হুমকি-ধমকিসহ করা হয় নির্যাতন।

এছাড়াও শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে গিয়ে বিচারের দাবীতে অবস্থান নেয় ভুক্তভোগী নিহত পরিবারের সদস্যরা।

মেসেঞ্জার/নাজিম/তুষার