ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৪ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

গুণীজনদের মরণোত্তর সম্মাননা দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিল থানচি প্রেসক্লাব

চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি (বান্দরবান)

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

গুণীজনদের মরণোত্তর সম্মাননা দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিল থানচি প্রেসক্লাব

ছবি : মেসেঞ্জার

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেই বান্দরবানের থানচিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূমিদানে অবদানসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, এমন ১০জন মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসার ও ইতিহাসে স্থান অর্জন করে নিলেন থানচি প্রেসক্লাবের সকল সদস্যরা। সর্বপ্রথম মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানে পাহাড়ের ইতিহাসের স্থান গড়ায় সাংবাদিকদের প্রাণস্পন্দনের সংগঠন থানচি প্রেসক্লাবের ইতিবাচক কার্যক্রমগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।

পাহাড়ে ১০ মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে আছেন– ১৯৮১ সালে উপজেলা নামকরণের পরে উপজেলায় প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে থানচির আপামর জনতার ভোটে নির্বাচিত হন- চন্দনাইসের খাগরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ইউছুপ। ১৯৮৪ থেকে ৮৯ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসস্থান'সহ অবকাঠামো নির্মাণ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ২০০৫ইং সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

হেডম্যান বয়ক ম্রো, তিনি ১৯৭৮ সালে ৩৬০নং কোয়াইক্ষ্যং মৌজায় প্রধান হেডম্যান হিসেবে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। ১৯৮১ হতে ১৯৯৬ পর্যন্ত থানচিতে উপজেলা পরিষদ, থানা, বিজিবি ক্যাম্প, হাসপাতাল, হাট বাজারসহ নানান সরকারি বেসরকারি দপ্তরের স্থাপনাগুলোতে জমিদান করে উন্নয়নের ভূমিকা ও অসামান্য অবদানের উৎস্বর্গ করে কৃতিত্ব অর্জন করেন। তিনি ২০০৭ সালে বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান।

সাতকানিয়া বাজালিয়া নিবাসী মংওয়ে (মাহাজন) থানচি সদর ইউনিয়নের দু’বারের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের টগর উৎপাদি প্রাপ্ত হয়ে অন্যরকম সমাজপতি হিসেবে অসামান্য অবদানে ভূষিত হন। একইভাবে সাতকানিয়া উপজেলা নিবাসী অনিল কুমার বিশ্বাস। তিনি থানচি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, উষামং হেডম্যান কলেজের জমিদাতা, মংসুইথোয়াই হেডম্যান বলিপাড়া বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিদাতা, শৈক্যউ চেয়ারম্যান নাইক্ষ্যং পাড়া স্কুলের জমিদাতা, ঞয়হ্রাণ মারমা নাইদারী পাড়া স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ ও নামকরণ, অনাথ শিশুদের অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত উঃ ওয়াইমিন্দা মহাথের, ও প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে গেছেন থানচি উপজেলার কৃতিত্ব সন্তান সাংবাদিক চবাথুই মারমা।

থানচি প্রেসক্লাবের সদস্যদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে ২০২৫ সালে এসেই সম্প্রতি প্রেসক্লাবের আয়োজনে বিএনকেএস ও হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে সার্বিক-সহযোগিতায় উপজেলা মাল্টিপারপাস হলরুমে প্রেসক্লাবের কার্যকরী নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলার কৃতি সন্তানদের মরণোত্তর গুণীজন সম্মাননা, ১০ জন জীবিত গুণীজন সংবর্ধনা ও ১০ জন অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে, এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন ও ভূমিদানে অবদানের কৃতিত্ব স্বরূপ ১০ মরণোত্তর গুণীজন সম্মাননা প্রাপ্তদের ছবিসহ তাদের অবদানের বিবরণগুলো লিখন মাল্টিপারপাস হলরুমে টাঙিয়ে রাখার দাবি জানানো হয়। মরণোত্তর ১০ গুণীজনদের নামে সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো ভবন, রাস্তা-সড়ক, মোড়, অলিগলি, ভবনের তাদের নামকরণ এবং পর্যটন স্পটগুলোতে এলাকার ঐতিহ্যের নামকরণে পার্বত্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক বরাবরে দুইটি স্মারকলিপিতে গণস্বাক্ষর করে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন– প্রেসক্লাব সদস্যবৃন্দ ও থানচিবাসী।

থানচি প্রেসক্লাবের সভাপতি মংবোওয়াংচিং মারমা (অনুপম) জানান, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন ও ভূমিদানে অবদান স্বরূপ ১০জন মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানের ফলে পাহাড়ের ইতিহাস অর্জন করেছে থানচি প্রেসক্লাব। মরণোত্তর গুণীজনদের সম্মাননা দিয়ে প্রেসক্লাবের কার্যকলাপের ইতিবাচক সূচনীয়তার ভূমিকা রাখতে পেরেছি। থানচিবাসীদের সকলের মুখেই প্রেসক্লাবের এ উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেছেন। প্রেসক্লাবের এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, মাল্টিপারপাস হলরুমে ১০ জন মরণোত্তর গুণীজনদের বিবরণ লিখন ও ছবি টাঙানো প্রসঙ্গে প্রেসক্লাবের দাবি পূরণের জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো., সদস্য উবাথোয়াই মারমাসহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সহমত পোষণ ও সম্মতিজ্ঞাপন করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুমোদনের জন্য জানানো হবে।

মেসেঞ্জার/তুষার