ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৪ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

যশোর সীমান্তে কোল্ড ইনজুরির ঝুঁঁকিতে বোরো বীজতলা

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল (যশোর)

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

যশোর সীমান্তে কোল্ড ইনজুরির ঝুঁঁকিতে বোরো বীজতলা

ছবি : মেসেঞ্জার

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা-বেনাপোলে শীত ও কুয়াশা দুই-ই বেড়ে চলেছে। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে যেনো ঢাকা পড়ছে প্রকৃতি। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের সদ্য প্রস্তুুত করা বীজতলা কোল্ড ইনজুরির ঝুঁঁকিতে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষক তাদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে অনেকটা দেরিতে এ অঞ্চলে শীত অনুভূত হতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষের দিকে এ অঞ্চলে গরমের প্রভাব ছিল। তবে ডিসেম্বরের শুরুর দিন থেকে তা ক্রমশ কমতে থাকে। যা গত কয়েকদিন থেকে এ অঞ্চলে শীত জেকে বসতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তা কমছেই।

রোববার যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে যশোরের তাপমাত্রা কমছে। যা শনিবার ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিনই এক থেকে দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা কমতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের ওই কর্মকর্তা জানান।

শীতের তীব্রতার পাশাপাশি প্রচন্ড কুয়াশায় এ অঞ্চলে চরম হুমকিতে পড়েছে বোরোর বীজতলা। তবে এতে কৃষকের খরচ বাড়ছে বলে তারা জানান।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শার্শা উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ১৫০ হেক্টর। আর ১১৫৭ হেক্টর জমিতে বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা। সেই অনুপাতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১১৭৫ হেক্টর। এখনো অনেকে বোরোর বীজতলা তৈরি করছে বলে জানা গেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছে কৃষক।

উপজেলার অনেক মাঠে কৃষক তাদের বোরো ক্ষেত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। কৃষক জাইদুল ইসলাম বলেন, বোরোর বীজতলা তৈরির এখন ভরা মৌসুম। এজন্য আমরা ধানের চারা তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা বাজার থেকে পলিথিন কিনে এনে বীজতলা রক্ষার চেষ্টা করছি।

আব্দুল মান্নান নামে আরেক চাষি বলেন, এমনিতে এ বছর আমন আবাদে ফলন কম হয়ে আমরা লোকসানে পড়েছি। তারপর বাজার থেকে চড়ামূল্যে পলিথিন কিনে বীজতলা রক্ষা করতে গিয়ে বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বোরো আবাদ ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, শীত ও কুয়াশায় ধানের চারার মাথায় পানি জমে থাকা এবং একই সঙ্গে ঠান্ডাজনিত কারণে বীজতলা বিনষ্ট হয়। এ জন্য কৃষকদের পুরো বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বোরোর বীজতলা রক্ষায় এখন পলিথিনই একমাত্র ভরসা। তিনি বলেন, এবছর অনেক চাষিই সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আবু তালহা বলেন, বোরোর ভালো ফলনের জন্য মানসম্মত ধানের চারার বিকল্প নেই। এজন্য আমরা অনেক আগেই কৃষককে এসব প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলার জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষকও তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে রাতের বেলা ঢেকে রাখছে এবং দিনের বেলায় পলিথিন তুলে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা যদি আরও কমতে থাকে তাহলে ক্ষেত থেকে ঠান্ডা পানি বের করে বেশি বেশি সেচ দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

মেসেঞ্জার/তুষার