ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার চারলেনের উন্নীতকরণ কাজে নানা অনিয়মসহ ধীর গতির অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে বিবি এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে ধীরগতি থাকলেও মানের দিক দিয়ে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। সার্বক্ষণিক কাজের দেখভাল করছি।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ২৩ শে জুন যমুনা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ টি জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয় এ সড়ক। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প (প্যাকেজ -৫) ফেইজ-২ অধীনে আইনি প্রক্রিয়া শেষে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম গ্রুপ। প্রকল্পের প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এতে ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার মহাসড়কে একটি ফ্লাইওভার, ৮টি ব্রিজ, ১০ কালভার্ট ও দুটি আন্ডার পাস ছাড়াও একটি সার্ভিস লেন নির্মাণ রয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ শে জুন মাসে শেষ করার কথাও ছিল।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো করলে অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। তাদের কাজে বেশ গাফিলতি রয়েছে। এছাড়াও তারা জানান, প্রকল্পের কাজটি শেষ হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে স্থানীয় লোকজনসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ টি জেলার মানুষ।
জোকার চরের মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন জানান, মহাসড়কের আশেপাশের মানুষের খুবই ভোগান্তি। প্রতিদিন সড়কের গাড়ির চাপ বিকেল হলেই ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদ আসলে তো দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তিসহ আমরাও ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যাই। চারলেনের কাজ দ্রুত শেষ না হওয়াতে স্থানীয় পর্যায়ে আমরা খুবই ভোগান্তিতে রয়েছি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আবেদন সামনে রমজান আসছে, রমজানের মধ্যেই যদি চারলেনের কাজ শেষ করা যেত তাহলে এবারের যে রমজানের ঈদ হয়তো ভোগান্তি থেকে লাঘোব হত।
স্থানীয় হাসমত, নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন যুবক বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিম্নমানের বালি দিয়ে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা মনে করেন, এই নিম্নমানের বালিতে কাজ করলে মহাসড়কের টেম্পার কমে যাবে। এতে দ্রুত মহাসড়কটি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যে বালিতে কাজ চলছে সেটি এক শ্রেণীর রাবিশ বলে মনে করছেন তারা। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান, এই সড়কটি মনায়েম গ্রুপ যে কাজ করছে সে কাজের কঠোর নজরদারিতে দেখভাল করার। তারা আরো বলেন, আমরাতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে জানিনা আমাদের চোখে যেটি ধরা পড়ছে এবং মনে হচ্ছে তারা নিম্নমানের বালি ব্যবহার করে কাজ করছেন।
স্থানীয় ধলা টেংঙ্গরের ওমর গাজীর ছেলে শরীফ জানান, মোনায়েম গ্রুপ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যে কাজ করছে সেটি খুবই ধীরগতিতে। এছাড়াও কাজের মান নিয়ে তিনি বলেন, এই মহাসড়কের কাজ যদি দেশের বাহিরে কোন সংস্থা করতো তাহলে এর মান আরো ভালো থাকতো মহাসড়কের লংজিবিলিটিও বাড়তো।
মোনায়েম গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. রবিউল আওয়াল বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও কাজের মানের দিক দিয়ে কোন গাফিলতি নাই, যথাযথ মানের কাজ হচ্ছে।
স্থানীয়দের বালির ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলে সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষাগারে বালিসহ প্রত্যেকটা জিনিস পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যথাযথভাবে কাজ করা হচ্ছে।
বিবি এর ইঞ্জিনিয়ার পলক দাস বলেন, এখানে যে মোটা বালিটা ব্যবহার করা হয় কংক্রিটের জন্য এটার একটা পোর্ট আছে, যেটা ২ পয়েন্ট ২ এর উপরে লাগে। সেটি আমরা নিয়মিত দেখভাল করে থাকি। সেক্ষেত্রে যদি দেখি ২ পয়েন্ট ২ এর নিচে আছে, তাহলে সেটি ব্যবহার করিনা। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে বালি ৫ নাম্বার ব্রিজের পাশে ধলাটেঙ্গরে কাজ চলছে সে বালি স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এই বালি পরীক্ষাগারে নিয়ে টেস্ট করব। যদি ২পয়েন্ট ২ এর নিচে থাকে তাহলে বাতিল করবো।
যমুনা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, আমরা সার্বক্ষণিক মোনায়েম গ্রুপের কাজ দেখভাল করছি। কোন রকমের সুযোগ নেই কাজের হেরফের করার। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের খুবই ধীরগতি করছে।
মেসেঞ্জার/তুষার