ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের নরসিংহপুর এলাকায় অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন শারমীন গ্রুপের ছাঁটাইকৃত কয়েক শতাধিক শ্রমিক। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিকরা জানান, কারখানায় খাবার নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। পরে সে ঝামেলা আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে ৪৩০ জন শ্রমিককে পাওনা না দিয়ে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সমাধানে প্রথমে গ্রামীণ কনভেনশন সেন্টার এবং পরে রাজ পার্কে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আজ পাওনাদির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশ-১ এর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সম্প্রতি মালিকপক্ষের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে কারখানায় শ্রমিকদের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজনকে কেন্দ্র করে কারখানার অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মালিকপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৩ ধারায় বেশ কিছু শ্রমিককে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এবং পরবর্তীতে তদন্ত করে মালিকপক্ষ যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে, তাদের চাকুরিচ্যুত করে। চাকুরিচ্যুত হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪৩০ জন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত চাকুরিচ্যুত এসব শ্রমিকরা শ্রম আইনের ২৬ ধারায় সকল সুবিধাসহ তাদের চাকুরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিজিএমইএ-তে সকল পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সমাধান চলে আসবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, সম্প্রতি হামীম গ্রুপের মালিকের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে মালিকপক্ষ সকল শ্রমিকদের দাওয়াত দিয়ে ভোজের আয়োজন করে। খাওয়া-দাওয়ায় অংশ নেওয়া একটি পক্ষের, বিশেষ করে শারমীন গ্রুপের শ্রমিকদের অভিযোগ দাওয়াত দিয়ে হামীমের শ্রমিকদের ভালোভাবে আপ্যায়ন করলেও শারমীনের শ্রমিকদের আপ্যায়নে ত্রুটি ছিল। বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই কারখানার ভেতরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ভাংচুরের অভিযোগও শোনা গেছে। এরপর থেকে শ্রমিকরা কারখানায় কাজ বন্ধ রাখে।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৩ ধারা ও ২৬ ধারার পার্থক্য উল্লেখ করে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ২৩ ধারায় যদি শ্রমিকদের বরখাস্ত করা হয় এবং তদন্তে অপরাধ প্রমাণের পর কোনো শ্রমিকের চাকরি যায়, তবে তিনি বেতন ছাড়া অন্যকোনো সুবিধা পাবেন না। কারণ অপরাধমূলক কাজের জন্য তার চাকরি গেছে। আর ২৬ ধারায় কোনো শ্রমিকের চাকরির অবসান করা হলে তিনি আইনের অধীনে যাবতীয় বেনিফিট প্রাপ্ত হন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, শারমীন গ্রুপের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আমরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে গতকাল ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধে রাজি নয় মালিকপক্ষ। ফলে গতকাল কোনো সমাধান হয়নি। তাই আজ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। আজ আবারো শ্রমিক প্রতিনিধি, মালিকপক্ষ, পুলিশ ও বিজিএমইএর আলোচনা চলছে।
মেসেঞ্জার/তুষার