ছবি : মেসেঞ্জার
কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে এনেই গুলি করে হত্য করা হয়েছিল খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে। গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু নামের খুলনার যুবক। আর এই পাপ্পু খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদের ভাতিজা। হুজি শহীদকে ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামি ব্যাংকের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর সে হত্যা মামলার আসামি গোলাম রব্বানী টিপু।
হুজি শহীদ হত্যার প্রতিশোধসহ স্থানীয় দ্বন্ধের জের ধরে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ঋতু নামের নারীটি। হত্যার সময় পুরোদমে সহযোগির ভূমিকায় ছিলেন গোলাম রসুল নামের খুলনার অপর যুবকসহ কয়েকজন।
ঘটনার পাঁচদিন পর মৌলভীবাজার থেকে সরাসরি জড়িত এই তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধুরেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানাধীন কাপনা পাহাড় এলাকা বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া তিন জন হলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দেওয়ানা মোল্লাপাড়ার সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪), একই এলাকার মো. জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭), খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মধ্য কারিগরপাড়ার হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ৮ জানুয়ারি ঋতুকে সাথে নিয়ে কক্সবাজার আসেন গোলাম রব্বানী টিপু। ৯ জানুয়ারি গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যে পুলিশ জানতে ঘটনায় জড়িত নারীসহ ৩ জনকে মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ৩ জনের দেয়া তথ্য মতে কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকাস্থ কক্স কুইন রিসোর্ট নামীয় আবাসিক হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষের চিলেকোঠা হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়া।
পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ঋতু নামের নারী কক্সবাজার ঘুরতে এসে কাউন্সিলর টিপুর সঙ্গে হোটেলে উঠেছিলেন।
জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, হত্যাকান্ডের পর থেকে সঙ্গি নারী কোন হাদিস পাওয়া না গেলেও হোটেল কক্ষে বাসের একটি লাগেজ টেগ পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ওইটি ছিল ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের একটি বাসের। মুলত সেই বাসেই কক্সবাজার আসে হত্যাকারিরা। এটির সুত্র ধরেই কাজ শুরু করে তারা। এই বাসের অন্যান্য যাত্রীসহ নাম্বার তল্লাশী হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এক পর্যায়ে ঋতুর নাম উঠে আসে। তারপর থেকে ঋতুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে এই হত্যাকান্ডের অন্যতম সহযোগী ঋতুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপারের দেয়া তথ্য বলছে, গ্রেপ্তার ঋতু খুলনার দৌলতপুরের সেলিম আকন্দের মেয়ে। তার স্বামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। দীর্ঘদি ধরে কাউন্সিলর টিপুর সাথে সখ্যতা তৈরি করে পুরো হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নারীটি।
মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গোলাম রব্বানী টিপু দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামী ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুর খান এ সবুর রোডে ইসলামি ব্যাংকের সামনে শহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর পাপ্পু শহীদের ভাতিজা। একাধিক মামলার আসামি পাপ্পুকে শুটার নামে এলাকায় চেনেন। হুজি শহীদ হত্যার প্রতিশোধ এই হত্যার একটি কারণ। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও অন্যান্য কারণও রয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় র্যাবের অভিযানে টিপুর সঙ্গে বেড়াতে আসা কেসিসি’র আরেক সাবেক কাউন্সিলর শেখ ইফতেখার হাসান সালু ও কক্সবাজারের বন্ধু মেজবাহ উল্লাহ ভূট্টো গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার সকলকে রিমান্ডের অবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে আদেশ পেলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
মেসেঞ্জার/তুষার