ঢাকা,  বুধবার
১৫ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

হিমাগারে আলু সংরক্ষণে বস্তার ওজন ৫০ কেজি চান মালিকেরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

হিমাগারে আলু সংরক্ষণে বস্তার ওজন ৫০ কেজি চান মালিকেরা

ক্যাপশন: বুধবার রাজশাহী চেম্বার মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হিমাগার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ  -টিডিএম।

রাজশাহীতে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা শ্রম আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা হিমাঘারে ঢোকাতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন হিমাগার মালিকেরা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী চেম্বার ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর বিধি ৬৩ অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককে ৫০ কেজি ওজনের অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট কোন দ্রব্য হাতে বা মাথাই করে উত্তোলন কিংবা বহন করানো যাবে না। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট এক রায়েও একই আদেশ দেন। কিন্তু এই আইন ও নির্দেশনা তারা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না মধ্যস্বত্ত্বভোগী আলু ব্যবসায়ীদের কারণে। ফলে শ্রমিকের ঘাড়ে উঠে অতিরিক্ত ওজনের বস্তা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজশাহী জেলায় ৩৬টি হিমাগার রয়েছে। এবার সবাই সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা এবার ৫০ কেজি ওজনের বেশি ওজনের আলুর বস্তা হিমাগারে নেবেন না। গতবছর বস্তাপ্রতি হিমাগার ভাড়া নেওয়া হলেও এবার কেজিপ্রতি হিসেবে ভাড়া নেবেন। এ সিদ্ধান্তের পর মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা প্রচার করেন, হিমাগারে আলুর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এরপর জেলার তানোরে ছয়টি হিমাঘারে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ দেখান। এতে দেখা যায়, ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা না নেওয়ার কথা লিখে হিমাগারের সামনে টাঙানো ব্যানার খুলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। গত ১২ জানুয়ারি বিকালে সিসি ক্যামেরায় এমন ঘটনা ধরা পড়ে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা বলেন, গতবছর পর্যন্ত বস্তা হিসেবে আলুর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তাই মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা সবসময় ৫০ কেজির স্থলে ৭০ থেকে ৮০ কেজি আলু বস্তায় ভরেছেন। তারা বেশি আলু রেখেও কম ভাড়া দিয়েছেন। হিমাগার মালিকেরা বাধ্য হয়ে ওই বস্তা নিয়েছেন। কিন্তু এই বস্তা উত্তোলনের সময় শ্রমিকদের কষ্ট হয়েছে। আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করেছে। ফলে মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার বস্তা হিসেবে নয়; ভাড়া নেবেন আলুর ওজন করে। তাহলে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ওজনের বস্তা দেবেন না। তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পর রাজনৈতিক মদদে হিমাগারে হিমাগারে হামলা হচ্ছে। এতে হিমাগার মালিকরা উদ্বিগ্ন।

হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গত বছর ৫০ কেজির বস্তায় ৩৪০ টাকা ভাড়া নেওয়া হত। এতে কেজি প্রতি সংরক্ষণে খরচ পড়ত প্রায় সাত টাকা। কিন্তু ব্যাংকের সুদ হারসহ সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশন চলতি মৌসুমে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট টাকা। এরপরও কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে, এসোসিয়েশনের সদস্যরা আরও কম ভাড়ায়, নিজস্ব সিদ্ধান্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে তারা ৫০ কেজির বস্তার ব্যাপারে শ্রম আইন ও হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন দাবি করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরেরও সহায়তা কামনা করেন। এছাড়া যারা হিমাগারে হামলা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার আলীসহ অন্য হিমাগার মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার