ছবি : মেসেঞ্জার
সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা'র এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেপ্তারপূর্বক যথাযথ বিচারের দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ঘুরে এসে জিমনেসিয়ামের রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে অবস্থান করে ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে শতশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশের পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যেমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ প্রদানসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্র জনতার নেতৃবৃন্দরাু। ৫দফা দাবিসমহগুলো হল- হামলায় আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার সরকার কর্তৃক বহন করা, পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিলকৃত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি পুনরায় পুনর্বহাল করা, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী জাতিসমূহের সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরা এবং সংবিধানে সকল আদিবাসী জাতিসমূহের স্বীকৃতি দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এসময় রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষার্থী হৃদয় চাকমা, সবুজ চাকমা, উজাই মারমাসহ অন্যান্য প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তরা বলেছেন, গেল রবিবার ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনের সদস্যদের একতরফা দাবির প্রেক্ষিতে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্রের পাঠ্যপুস্তকের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘আদিবাসী’ শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিল করে। কতৃর্পক্ষের এহেন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং বাতিলকৃত গ্রাফিতিটি পুনর্বহালের দাবিতে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ বুধবার এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয়। এর পরপরই বিশেষ মহলের উস্কানিতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সংগঠনটি একই জায়গায় এনসিটিবি ভবন ঘেরাও এর কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এসময় আদিবাসী ছাত্রদের উপর লাঠি সোঠা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ কমপক্ষে ৪ জন গুরুতর আহত হন এবং ১৫ জনের অধিক আহত হন। আহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীও রয়েছেন। হামলায় আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালাতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং গুরুতর আহতরা অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
বক্তারা আরো বলেছেন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর ন্যাক্কারজনক এ হামলাটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হামলা। আদিবাসী ছাত্রজনতার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকা এবং সেই কর্মসূচি বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ এর আজকের কর্মসূচির বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন কোন ধরণের নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হামলা করার উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রিকেট স্টাম্প, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসা ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ এর সদস্যদের নিবৃত্ত করার কোন ধরণের চেষ্টা না করে পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। পাঠ্যপুস্তকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিটি পুর্নবহাল এবং ঢাকায় মতো জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে এখনও পর্যন্তকোন ধরণের আশ্বাস পাওয়া যায়নি যা কোনভাবেই কাম্য নয় এবং জুলাই অভ্যুত্থান চেতনার পরিপন্থি। আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু জাতিসমূহের প্রতি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বারংবার আস্ফালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদাসীনতা অর্ন্তভূক্তিমূলক, বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণের পথে সহায়ক নয়। শুধু তাই নয়, ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা চরম নিরাপত্তাহীন বোধ করছে।
মেসেঞ্জার/সুপ্রিয়/তুষার