ছবি : মেসেঞ্জার
পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রে বিশেষ শর্ত যুক্ত করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবিতে মানবববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে নওগাঁ সদর হাসপাতাল চত্বরে এ মানবববন্ধন কর্মসূচি পালিত।
নওগাঁ ড্রাগ এন্ড কেমিস্ট সমিতি নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি ও নওগাঁ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদ হায়দার টিপুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ছাত্র প্রতিনিধি রিয়াদুল সালেহীন, নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তালিকাভুক্ত এমএসআর (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকয়ারমেন্টস) সামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদার আশরাফুল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত সরদার, তৌফিক ইমাম, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
মানবববন্ধনে বক্তারা বলেন, চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি নওগাঁ সদর হাসপাতালে ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী কেনার জন্য অনলাইনে এমএসআর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বিশেষ শর্ত যুক্ত করেছেন। শর্তের বেড়াজালে অংশ নিতে পারছেন না অনেক ঠিকাদার। দরপত্রে বিভিন্ন শর্তাবলীর একটি অংশে বলা হয়েছে দরপত্রের জন্য ঠিকাদার বাছাইয়ের আগেই কাজ পেতে ইচ্ছুক ঠিকাদারকে ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রীর নমুনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। অথচ এই শর্ত বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে দেওয়া হয় না। পছন্দের ঠিকাদারকে বাছাই করার জন্য এই শর্ত যুক্ত করেছে তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী।
এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ করা ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়াসহ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী, প্রধান সহকারী স ম ওমর ফারুক ও স্টোর কিপার সাজ্জাদ হোসেন বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাঁদেরকে অপসারণসহ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, দরপত্র আহ্বানসহ নিয়ম মেনেই হাসপাতালে সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ৫ জানুয়ারি হাসপাতালে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকার এমএসআর সামগ্রী দরপত্র অনলাইনে আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ২৬ জানুয়ারি।
নওগাঁ ড্রাগ এন্ড কেমিস্ট সমিতির সভাপতি মাসুদ হায়দার টিপু বলেন, এমএসআর সামগ্রী কেনার জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তাতে তত্ত্বাবধায়ক স্বেচ্ছাচারীভাবে কিছু শর্ত যুক্ত করেছেন। দরপত্র পাওয়ার আগেই নাকি এমএসআর সামগ্রীর নমুনা জমা দিতে হবে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। নিয়ম বর্হিভূত শর্তগুলো সংশোধন করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী, প্রধান সহকারী স ম ওমর ফারুক ও স্টোর কিপার সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাঁদেরকে অপসারণসহ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল ও স্টোর কিপার সাজ্জাদ হোসেনকে হাসপাতালে তাঁদের কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোনে বারবার কল দিয়েও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী স ম ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকাদার বাছাইসহ হাসপাতালের সকল কার্যক্রম নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। বিধি অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের স্বার্থে দরপত্রে যে কোনো যৌক্তিক শর্ত যুক্ত পারেন। দরপত্র অনলাইনে আহ্বান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঠিকাদার বাছাই করে অনলাইনে নির্বাচিত ঠিকাদারের নাম প্রকাশ করবেন। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করার কিছু নেই। এছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি থাকলে তদন্ত করুক। তদন্ত হলেই সঠিক সত্য বের হয়ে আসবে।’
মেসেঞ্জার/বেলায়েত/তুষার