ঢাকা,  বুধবার
২২ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

রাজশাহীর সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর কথিত চার ‘ভাগ্নে’র ফাঁসি চেয়ে পোস্টারিং

আনিসুজ্জামান, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৮:১১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৮:১৩, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

রাজশাহীর সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর কথিত চার ‘ভাগ্নে’র ফাঁসি চেয়ে পোস্টারিং

ক্যাপশন : রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রি ওমর ফারুক চৌধুরীর কথিত চার ‘ভাগ্নে’র ফাঁসি চেয়ে সাটানো পোস্টার    -ছবি সংগৃহীত।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চার ভাইয়ের ফাঁসি চেয়ে ব্যাপক পোস্টারিং করা হয়েছে। এলাকাবাসীর পরিচয়ে সাঁটানো পোস্টারে আলোচিত চার ভাইকে রাজশাহী-১ আসনের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাগ্নে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত চার ভাইয়ের একজন গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। অপর তিনজন বিভিন্ন ব্যবসা করেন। তবে পোস্টারে চার ভাইয়ের আসল ব্যবসা ‘মাদক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার কে বা কারা সাঁটিয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পোস্টারে মাদক কারবারি হিসেবে চার ভাইয়ের ছবির পাশাপাশি কতটি মাদকের মামলার আসামি তার বিবরণ রয়েছে। অভিযুক্তরা রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের চার বারের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর পরিচয়ে চলতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওমর ফারুক চৌধুরীকে অভিযুক্তরা ‘মামা’ ডাকতেন এবং নিজেদের ফারুক চৌধুরীর ভাগ্নে পরিচয় দিতেন।

অভিযুক্তরা হলেন- গোদাগাড়ী সদরের মাদারপুরের মজিবর রহমানের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৪৩), মেহেদী হাসান (৪১), সোহেল রানা (৩৯) ও আব্দুর রহিম টিপু (৩৭)। মনিরুল ইসলাম গোদাগাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, চার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই মাদকের মামলা রয়েছে।

পোস্টারে চার ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম ৩ নস্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আব্দুর রহিম টিপু গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের নেতা এবং মেহেদী হাসান ও সোহেল রানা উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক।

জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভা ও থানার সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন এলাকায় চার ভাইয়ের ছবিসহ পোস্টার সাঁটানো হয়। পোস্টারে মনিরুলের ও আব্দুর রহিম টিপুর বিরুদ্ধে দু’টি করে এবং মেহেদী ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে একটি করে মাদকের মামলা এবং মেহেদীর বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার কথা উল্লেখ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে গোদাগাড়ী থানার সামনে সাঁটানো পোস্টার কয়েক তরুণ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তুলে ফেলেছে। ঐ তরুণেরা জানান, তাদের বাবা ও চাচাদের বিরুদ্ধে পোস্টারিং করায় তারা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পোস্টার তুলে ফেলেন।

জানা যায়, সবশেষ গত বছরের ৭ মে ৪ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন পাচারের অভিযোগে গোদাগাড়ী থানায় টিপুর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল পৌনে ৪ কেজি হেরোইনসহ মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হন। ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মাদকের মামলা হয়।

মনিরুলের ভাই টিপু অন্যতম শীর্ষ মাদক কারবারি বলে জানা যায়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজশাহীর শীর্ষ ১৫ মাদক কারবারির তালিকা বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠায়। ঐ তালিকায় টিপুর নাম ছিল। টিপুর বিরুদ্ধে গতবছরের ৭ মে গোদাগাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে আলোচিত চার ভাই আত্মগোপনে রয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, পিতার অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে উঠা চার ভাই বিগত ১০ বছরে বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। রাজশাহী শহরের আলীগঞ্জ নিমতলায় ২৮ কোটি টাকায় জমিসহ চারতলা বাড়ি রয়েছে তাদের। বাড়ির নিচতলায় করা হয়েছে মার্কেট। রাজশাহী শহরের নিউমার্কেটের তমা কালেকশন, তমা ফ্যাশন ও তমা সুজ নামে ৯৬, ৯৭ ও ১০০ নম্বর দোকানের মালিক টিপু। সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটে তার একাধিক দোকান রয়েছে। গোদাগাড়ীর হাবাসপুরে রয়েছে খামার।

এছাড়া গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুর মহল্লায় রয়েছে তিনটি বাড়ি। এর মধ্যে একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে বসবাস করেন পুরো পরিবার। অন্য দু’টি একতলা বাড়ি পরিত্যক্ত রয়েছে। মহিষালবাড়ী বাজারে রয়েছে চারটি দোকান। এর একটি জুয়েলারির দোকান। তমা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে মনিরুল নিজে বসতেন। মুনিয়া গার্মেন্টস ও আনুশকা গার্মেন্টসে বসতেন অপর দুই ভাই।

রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযুক্ত পরিবারের ৬৬ বিঘা ধানি জমি রয়েছে। এছাড়া পদ্মা নদীর ওপারের চরে রয়েছে আরও ২১ বিঘা জমি। কাউন্সিলর মনিরুল ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৩৭৬৩ গাড়িতে চড়েন। ঢাকা মেট্রো-চ ২০-৬১১৩ নম্বরের পৃথক মাইক্রোবাসে চড়েন টিপু। আরেকটি সাদা মাইক্রোবাস এবং মাছ পরিবহনের ট্রাকও আছে তাদের।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তৎকালীন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস উপহার দিয়েছিলেন টিপু। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ছিল টিপুর নামেই। এনিয়ে তখন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত ফারুক চৌধুরী দাবি করেছিলেন, টিপুর কাছ থেকে তার ছেলে গাড়িটি কিনেছেন।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন জানান, আলোচিত চার ভাইকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। ওসি বলেন, চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পোস্টার তিনিও দেখেছেন। তাদের যেকোনো স্থানে পাওয়া মাত্রই গ্রেপ্তার করা হবে। ওসি বলেন, তারা পাঁচ ভাই। চারজনই মাদক কারবারে জড়িত। তিনি আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) থাকাকালে একজনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছিলেন। পরে অভিযুক্ত জামিনে বেরিয়ে আবার মাদক কারবারে জড়ায়।

 

মেসেঞ্জার/তুষার