ছবি : মেসেঞ্জার
জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন খানের বিরুদ্ধে পদায়ন, বদলি, দুর্নীতি, অর্থ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তার অনিয়ম- দূর্নীতির কারণে জেলার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন- দিন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জেলা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
এদিকে বুধবার (২২ জানুয়ারি) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ এবং অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আতাউল গনি তিনি তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান।
জানা গেছ, গত ২০২৪ সালে জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ৩২৫জন শিক্ষক (রাজস্ব) ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এ সব শিক্ষকদের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২০জুনের মধ্যে যোগদাদের কথা ছিল। কিন্তু মেলান্দহ উপজেলায় (রাজস্ব) খাতে ১৩ জন শিক্ষকের জেলা অফিসে ২০ জুন যোগদান করার কথা থাকলেও যোগদান করেন ১২জন শিক্ষক।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত একটি দপ্তর আদেশ দেন এবং রেজিস্টারেও ১২ জন উল্লেখ করে একজন অনুপস্থিত রাখেন। কিন্তু আসমাউল হুসনা নামে একজন শিক্ষক যোগদান না করায় তিনি ২৫ জুন যোগদান করতে এলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন খান তাকে যোগদান না করিয়ে প্রথমে ৫ লাখ টাকা উৎকোচ দাবী করেন। পরে ঐ শিক্ষকের বাবা আব্দুস ছালাম তাকে কাকুতি মিনতি করে সুদের উপর ৩ লাখ টাকা নিয়ে এসে উৎকোচ দিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আগের অফিস আদেশ বাতিল করে একই তারিখ ব্যবহার করে আরো একটি অফিস আদেশ দিয়ে যোগদানের নির্দেশ দেন। উৎকোচ প্রদানের বিষয়টি ভুক্তভোগীর পিতা আব্দুস সালাম সত্যতা স্বীকার করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আরো জানা গেছে, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন খান যোদানের পর থেকে শিক্ষাকদের মৌখিক পরীক্ষায় তিন-চারশত পরীক্ষার্থীর কাছে বেশী নাম্বার পাইয়ে দিতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। এদিকে তারই অফিসের হেডক্লার্ক আলী আহাম্মদ, পিয়ন সিয়াম ও গাড়ী চালক কমলের সহযোগিতায় নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ভাল সুবিধাস্থানে যোগদানের কথা বলে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষকের কাছে সর্বনিন্ম ৫০হাজার থেকে শুরু করে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ ছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মৌলভীরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সানজিদা হক নামে একজন শিক্ষক তিনি দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তাকে ২০১৮ সালে বরখাস্ত করা হলে তদস্থলে পশ্চিম লংকারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রহিমা খানম অনলাইনের আবেদন করে বদলী হন মৌলভীরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিস কর্তৃক অভিযুক্ত শিক্ষককে পুনরায় তার স্থলাভিসিক্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে শূন্যে পদ না থাকায় বাধ্য হয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্তমর্তা লংকারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও সরকারি বিধি বহির্ভুতভাবে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দ্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন খান।
শুধু তাই নয়, গত ২ জুলাই নতুন পদায়নকারী প্রায় ৫০ জন শিক্ষকের যোগদানের আদেশ পুনরায় সংশোধন করে আবারো শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে নতুন কর্মস্থলে পদায়ন করেছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগকারী মো. শহিদুল্লাহ, জাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ আইনুল হক, মো. মনোয়ার হোসেন, মো. আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন জানান, আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি জামালপুরে বদলী করে একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো হোক।
এদিকে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আতাউল গনি জানান, আমি নিজেই মঙ্গলবার তদন্ত করে এসেছি। তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নাই।
মেসেঞ্জার/হালিম/তুষার