ছবি : সংগৃহীত
বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দুইটি প্রকল্পের দরপত্র হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। এতে দুই শতাধিক ঠিকাদার সিডিউল কিনে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। সিডিউলের টাকা আর ফেরত পাবেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ-দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের পরিচালক নাজিরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রতিটি লটে ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭১২ টাকায় ২৬টি লটের দরপত্র আহ্বান করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বিল পুনঃখননের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রতি লটের দরপত্রে অংশ নিতে ঠিকাদারেরা এক হাজার টাকা মূল্যের সিডিউল কিনেন। অনেক ঠিকাদার একাধিক লাইসেন্সে একাধিক লটের দরপত্র কিনেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপিতে দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারিত ছিল।
কিন্তু ঠিকাদাররা জানতে পারেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারদের অভিযোগ, ‘শুরু থেকেই গোপনে দর ফাঁস করে পছন্দের লোকদের কাজ দিতেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাজিরুল ইসলাম। এবার ঘুষের দরদাম ঠিকমত না হওয়ায় দরপত্র স্থগিত করেছেন। ফলে টেন্ডারে অংশ নেওয়া প্রায় ১৫০ ঠিকাদারের এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটা চরম স্বেচ্ছাচারিতা। ঠিকাদারেরা সিডিউল কিনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘এক সেট শিডিউলের দাম ২৬ হাজার টাকা। তিনি চারটি লাইসেন্সের বিপরীতে ১ লাখ ৪ হাজার টাকায় চারসেট সিডিউল কিনেন। দরপত্র স্থগিত করায় ১ লাখ ৪ হাজার টাকা তার লোকসান হয়েছে।’ জানা গেছে, দরপত্র স্থগিতের পর ঠিকাদারেরা পিডির সাথে দেখা করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তখন পিডি ২০টি লট স্থগিত রেখে অবশিষ্ট ৬টি লটের কাজ রাখার আশ^াস দেন। শেষ পর্যন্ত সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে।
পিডি নাজিরুল ইসলাম অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ঠিকাদারেরা অংশ নিয়েছিলেন। বিএমডিএ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় কাজ করে। অন্য জেলার ঠিকাদারেরা দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পেরে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছিল। তাই দরপত্র স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আবার দরপত্র আহবানের কাজ চলছে। এবার ১৬ জেলার ঠিকাদারেরা অংশ নিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘দরপত্র স্থগিতের এক্তিয়ার তার আছে। এটিই দরপত্রের প্রধান শর্ত। সিডিউলের টাকা সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ায় সেটি আর ফেরত পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে বিএমডিএ’র ‘ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) শহীদুর রহমান বিএমডিএর গভীর নলকূপের পাইপলাইন সম্প্রসারণের ৯৫টি লটে ১৯ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করেছিলেন। প্রতিটি লটে ২০ লাখ টাকার কাজের প্রতিটি সিডিউলের মূল্য ছিল এক হাজার টাকা। বেশিরভাগ ঠিকাদার সবগুলো লটের জন্য ৯৫ হাজার টাকার শিডিউল কিনেন। একাধিক লাইসেন্সে অনেকে কয়েক সেট শিডিউল কেনেন। এই দরপত্রেও ঠিকাদারেরা কোটি টাকার বেশি লোকসান গুণছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই দরপত্র আহ্বানের গত ৫ জানুয়ারি স্থানীয় প্রয়াত এক জামায়াত নেতার ছেলের সহযোগীদের নিয়ে পিডির কার্যালয়ে গিয়ে তাদের কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। পিডি বলেন, ই-জিপি সিস্টেমে কাউকে কাজ দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এসময় পিডিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং দপ্তরে ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনার পর দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।
পিডি শহীদুর রহমান বলেন, একই টেন্ডার আবার আহবান করার প্রক্রিয়া চলছে। এবার আর ই-জিপি নয়, লটারিতে কাজ বন্টনের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের কারণে লটারিতে যাওয়ার বিষয়ে ঈঙ্গিত দেন তিনি। তিনি স্বীকার করেন, দরপত্র প্রক্রিয়ায় যেসব ঠিকাদার সিডিউল কিনেছিলেন, তারা টাকা ফেরত পাবেন না।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার