ছবি : মেসেঞ্জার
দরিদ্রতা ও অভাব অনটন মেহেদী হাসানের চলার পথে বাঁধা হতে পারেনি। সকল প্রতিকূল অবস্থাকে জয় করে সে তার নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছে গেছে। তার চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের জোরে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
অভাব অনটনের সংসারে মেহেদী হাসানের এ সাফল্যে এলাকাবাসী খুশি হলেও লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাঁর বাবা-মা। মেহেদী হাসান যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের আনারুল ইসলাম ও শিল্পী খাতুন দম্পতির ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় মেহেদী।
মেহেদী হাসান বল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক সমাপনী, বল্লা (বিএনকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি ও যশোর সদর উপজেলার নতুনহাট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়।
মেহেদী হাসানের পিতা আনারুল ইসলাম একজন দিনমজুর। শারীরিকভাবে অসুস্থও। স্বল্প আয়ে অনেক কষ্টে ৫ জনের সংসার পরিচালনা করেন। মা শিল্পী খাতুন বাড়িতে হাঁস-মুরগি-ছাগল-গরু পালন করেন। তাঁদের ছেলে সব প্রতিকূলতা জয় করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ সংবাদে যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলের খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে চিন্তিত। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে ছোটটি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
মেহেদীর মা শিল্পী খাতুন বলেন, ছেলেকে প্রাইভেট পড়তেও টাকা দিতে পারিনি। ছাগল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকার দিয়েছিলাম। সে টাকায় মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করেছে আর থেকেছে। এখন মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ চালানোর বিষয়ে দুঃচিন্তায় আছি। বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো দুটি মেহগনি গাছ বিক্রয় করেছি। আর বাড়ির হাঁস, মুরগি, ছাগল বিক্রি করে ভর্তির টাকা ম্যানেজ করছি।
মেহেদীর অসুস্থ দাদা আব্দুল মোতালেব বলেন, আমার দুই বিঘার মতো জমি, ছয়টা সন্তান। মেহেদীর বাবা আনারুলও আমার মতো অসুস্থ। অনটনের মধ্যে সংসার চালায় সে। পরিবারের এসব ঘটনা মেহেদীর জানা। সে জন্যই মেহেদী কখনো প্রাইভেট পড়ার কথা মনেও করেনি।
মেহেদী হাসান এ প্রতিনিধিকে জানায়, আমি খুব অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমাকে গ্রাম ও আমার স্কুল কলেজের শিক্ষকবৃন্দ অনেক সহযোগিতা করেছে। দিনমজুর পিতার সাথে অনেক কাজের সহযোগিতা করতে হয়। কাজের সাথে সাথে লেখাপড়া চালিয়েছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘন্টা করে বই পড়েছি। নিজের লক্ষ্যকে জয় করার জন্য লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই।
মেহেদী আরো জানায়, একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। আমি গ্রামের দরিদ্র, অসহায় ও নিম্ন আয়ের, যারা চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত মানুষ, তাদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় হবে আমার প্রথম কাজ। তিনি সকলের দোয়া চেয়েছেন।
মেসেঞ্জার/তুষার