ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩০ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে হামলার শিকার ফুলবাড়ীর সাদপন্থি সুমনের দাফন সম্পন্ন

ইউনুছ আলী আনন্দ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে হামলার শিকার ফুলবাড়ীর সাদপন্থি সুমনের দাফন সম্পন্ন

ছবি : মেসেঞ্জার

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের শহীদ লুৎফর রহমান সরণি (থানা রোড) সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সাদপন্থি তাবলিগ সাথী মিজানুর রহমান সুমন (৩৮) ঢাকা মেডিকেলে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসায় থাকার পর ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোররাত ৩ টায় মারা যায়।

তার মরদেহ ঢাকা থেকে এনে বুধবার দ্বিতীয় দফার জানাযা সম্পন্ন করে পারিবারিক কবরস্থান বিদ্যাবাগীশ চাঁদেরহাট এলাকায় জানাযা সম্পন্ন করে পারিবারিক কবরস্থান চাঁদেরহাট বিদ্যাবাগীশ গ্রামে দাফন করা করা হয়েছে।

মিজানুর রহমান সুমনের প্রথম জানাযা ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। দ্বিতীয় জানাযা ২৯ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় ফুলবাড়ী জছিমিঞা মাঠে ও তৃতীয় জানাযা সকাল সাড়ে ১০ টায় তার গ্রামের বাড়ি বিদ্যাবাগীশ চাঁদেরহাট এলাকায় সম্পন্ন করে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মিজানুর রহমান সুমনের দ্বিতীয় জানাযা নামাজে ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার তাবলিগ সাথী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এতে বক্তব্য দিতে মরহুম তাবলিগ সাথী মিজানুর রহমান সুমনের সম্পর্কের বড়ভাই খোরশেদ আলম সাউদ বলেন, আমার ছোটভাই সুমনকে টঙ্গীর মাঠে খুন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছোটভাই সুমন ছোট থেকে নামাজ পড়ে। সে তাবলিগ ভালোবেসে টঙ্গীর মাঠে গেছে। পুলিশ মারলে পায়ে মারে। আর হুজুররা আমার ছোটভাইকে মাথায় আঘাত করে মেরেছে। তার মাথায় যেভাবে আঘাত করেছে তা মারাত্বক। হুজুররা আমাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দিবে। অথচ আমরা কি দেখলাম এটা। আমরা এটা চাইনা।

জানা গেছে, সাদপন্থি মিজানুর রহমান সুমন গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমায় শরীক হয়ে জোবায়ের ও সাদপন্থিদের সৃষ্ট সংঘর্ষে হামলার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে প্রায় দেড়মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।

মিজানুর রহমান সুমন তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন মার্কাজের অনুসারী ছিলেন। তিনি ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের শহীদ লুৎফর রহমান সরণির (থানা রোড) সংলগ্ন এলাকার ছবির উদ্দিন প্রামাণিকের প্রথম পুত্র সন্তান।

তার একজন ছোটভাই থাকলেও বিগত কয়েক বছর আগে সে সড়কে গাড়ি চাপায় মারা যায়। বর্তমান নিহত মিজানুর রহমান সুমনের পরিবারে তার একমাত্র বিবাহিত বোন, বাবা, মা ও সুমনের ২ মেয়ে ১ ছেলে ও তার স্ত্রী রয়েছে।

মিজানুর রহমান সুমনের মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে আসলে কান্নার রোল পড়ে যায়। এলাকায় নিহত মিজানুর একজন সরল ও মিশুক স্বভাবের মানুষ হওয়ায় তার মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসী ছুটে আসে তার বাড়িতে। তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন মার্কাজের অনুসারীরা ছুটে আসেন।

তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন মার্কাজের অনুসারীরা (সাদপন্থি) তাবলিগের কুড়িগ্রাম সাথী ও ফুলবাড়ীর সাথীরা নিহত মিজানুরের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। নিহত মিজানুরের রুহের মাগফেরাতে তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন মার্কাজের অনুসারীরা (সাদপন্থি) সাথীদের উদ্যোগে ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কলেমা খতম ও কোরআনখানির আয়োজন করে।

মিজানুর রহমান সুমন ছোট থেকেই দিল্লীর নেজামুদ্দিন মার্কাজের অনুসারী হয়ে তাবলিগ জামাতের কাজ শুরু করেন। ৩ চিল্লা, ১ চিল্লা, মাসে ৩ দিন করে দ্বীনের দাওয়াতের সফরে যেতেন। সর্বশেষ মুরব্বীদের তাকাজা পূরণের জন্য তার কাছে টাকার জোগান না থাকার পরও ১৭ ডিসেম্বর ছুটে যায় টঙ্গীর ময়দানে।

এতে জুবায়ের-সাদপন্থিদের সৃষ্ট সংঘর্ষে জুবায়ের পন্থিদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে প্রায় দেড়মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার ভোর রাত ৩ টাকার দিকে মিজানুর রহমান সুমন মারা যায়।

মেসেঞ্জার/তুষার