ছবি : মেসেঞ্জার
২০২৩ সালে ২১ জুন। স্ত্রী-সন্তানের সাথে সিলেটের পাঠানটুলাস্থ বাসায় অবস্থান করছিলেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ। বাবাকে কাছে পেয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিল হারুন অর রশীদের তিন সন্তান। এরমধ্যেই রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাসায় হানা দেয় পুলিশ।
কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই স্ত্রী ও তিন সন্তানের কাছ থেকে হারুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হারুন অর রশীদের কোমলমতি তিন সন্তান তাহসিন, লিয়ানা ও নাশোয়ান সামিন। সেদিন রাতে পুলিশের সামনে সন্তানদের অসহায়র্ত কান্নার দৃশ্য মনে হলে এখনো পীড়া দেয় হারুন অর রশীদকে।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন তাকে আওয়ামীলীগের অফিস ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাংচুরের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ এই ঘটনায় কোনো সম্পৃক্ততা-ই ছিলোনা বলে দাবি করছেন হারুন। এখনো তিনি এই মামলা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
শুধু বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ একাই নন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এরকম উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়রানিমূলক মামলার ঘানি টানছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বিএনপি-জামাত নেতাকর্মী। ছাত্রজনতার গণঅভ্যত্থানে ২০২৪ সালের (৫ আগস্ট) আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের প্রায় পাঁচ মাস পর এখনোব্দি এসব মামলায় আদালত পাড়ায় দৌড়ঝাঁপ করছেন তাঁরা।
বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার আমাদের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৫ বছরে অন্তত ১০টি মামলার আসামি হয়েছি। জেল খেটেছি। এখনো তিনটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছি। নির্বাচনে সময় এলেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হয় আওয়ামীলীগের অফিস ভাংচুরের নামে না হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি পোড়ানোর নামে কিংবা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে আমিসহ বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হতো।
আমাদের বিরুদ্ধ এসব মামলা রুজু করার জন্য আওয়ামীলীগের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে তদবির করানো হতো। বিগত ১৫ বছরে এসব মামলার খরচ চালাতে গিয়ে আমার প্রায় ২৫ লাখ টাকা খুইয়েছি। মামলার খরচ চালাতে অনেক নেতাকর্মী ভিটেমাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েগেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এখনো চলমান। মামলাগুলি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করেছি।’
হারুন অর রশীদের স্ত্রী হোসনা বেগম বলেন, ‘বাসায় সবসময় আতঙ্কে থাকতাম কখন পুলিশ এসে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। অনেক সময় জানতামই না কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে জানতে পারতাম। আমার সন্তানদের মধ্যে এখনো ভীতি কাজ করে। বাসায় অপরিচিত কেউ এসে কলিং বেল চাপলে ওরা মনে করে হয়তো পুলিশ এসেছে তাঁদের বাবাকে গ্রেপ্তার করতে।’
উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন জামাতের সভাপতি ডাঃ হারিছ আলী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি নিজেও আওয়ামীলীগের অফিস পুড়ানোর কথিত মামলায় আসামী হই। অথচ এই ঘটনা কখন কোথায় কিভাবে হলো আমি কিছুই জানতাম না। আমিসহ জামায়াত বিএনপির অনেক নিরপরাধ নেতাকর্মীর ওপর জুলুম করা হয়েছে এরকম গায়েবি মামলা দিয়ে।’
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের রোষানলে পড়ে গায়েবি মামলায় এখনো অনেক মানুষ আদালতে এসে হাজিরা দিচ্ছে। অনেকে জেল খেটেছে। এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই।’
সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মল্লিক মো. মঈন উদ্দিন সোহেল জানান, ‘এসব মামলা এখন প্রত্যাহার প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যায়ে আছে।’
মেসেঞ্জার/আশিস/তারেক