
ছবি : মেসেঞ্জার
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, গ্রেপ্তার মৌসুমী রহমান উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি। এছাড়া তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত হন। গত সোমবার রাতে তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করেন। ঐ ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। এরপর মৌসুমীকে গ্রেপ্তারে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
ওসি আরও জানান, মৌসুমীর বাড়ি পুঠিয়া উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে পচামাড়িয়া গ্রামে। গত মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটি কালভার্টের ওপর মৌসুমীর স্বামী অহিদুর রহমানকে (৪৫) মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। অহিদুর আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজ বাড়িতে থেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করছিলেন। তাকে ‘তদন্তে প্রাপ্ত’ আসামি হিসেবে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলে করে পুলিশ।
ঐ দিন সকালে অহিদুরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরে বিকালে তার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর চালায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হয়। উপজেলা যুবদলের একাংশ আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিতরণের বিরুদ্ধে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ কর্মসূচি আড়ালে তার বাসভবনে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট শেষে তালা লাগিয়ে দেয়। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘রোড মার্চ পুঠিয়া টু পচামাড়িয়া’। উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার সরকার আল আমীন তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এই অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
হামলার সময় মৌসুমী রহমানের বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ভাংচুরের পর বাড়িতে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। কে এই তালা লাগিয়েছে তা স্থানীয়রা বলতে পারেননি। বাড়ির টিনের দরজায় কুড়াল দিয়ে কোপ দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। জানালার থাই গ্লাস ভেঙে বাইরে পড়ে আছে। জানালা দিয়ে ভেতরে দেখা যায়, ঘরের ভাঙা সব জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
‘রোড মার্চ পুঠিয়া টু পচামাড়িয়া’ কর্মসূচির ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার সরকার বলেন, তারা ২০০ থেকে ২৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন, কিন্তু তারা মোটরসাইকেল থেকে নামেননি। মৌসুমী রহমানের বাড়িও তারা চেনেন না। এলাকায় ঘুরে তারা চলে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, ‘ডিবি পুলিশ রাজশাহী থেকেই মৌসুমী রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
মৌসুমীর বাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’ পুলিশ বাড়ি পরিদর্শন করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি একই কথা বলেন।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/তুষার