![সিএমপির পুলিশ কেন সাজ্জাদকে খুঁজছে? সিএমপির পুলিশ কেন সাজ্জাদকে খুঁজছে?](https://www.dailymessenger.net/media/imgAll/2024February/Sazzad-2502081308.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
২১ অক্টোবর ২০২৪ সাল। চট্টগ্রামে ফিল্মি স্টাইলে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কালো একটি নোহা গাড়ি নিয়ে এসে নগরীর চান্দগাঁও থানার সমশের পাড়া মেডিকেলের পাশে এ যুবকের ওপর গুলি চালায় খুনিরা।
ওই সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাহসিন তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিল। এসময় কালো একটি নোহা গাড়ি নিয়ে আসে বুড়ির নাতি হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ, হাসান ও মোহাম্মদ। তারা গাড়ি থেকে নেমেই তাহসিনকে দুটি গুলি করে। এসময় তাহসিন বলে দুটি গুলি তো করেছেন আর মারিয়েন না। তবে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পরও তাকে ছাড় দেয়নি অপরাধীরা।
অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৮টি মামলার আসামি সাজ্জাদের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত ৩০ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেয়াওয়া হলেও নয় দিনেও কোন হদিস পাওয়া যায়নি সাজ্জাদের।
সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে সিএমপির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (পিআর) মাহমুদা বেগম বলেন, "সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখনও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।"
এর আগে ২৮ জানুয়ারি রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন এ সাজ্জাদ হোসেন। লাইভে তিনি কোনো অবস্থাতেই তাঁর হাত থেকে ওসি বাঁচতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই লাইভে ওসিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করেন। এ ঘটনায় ওসি বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) ভ্রুণ হত্যার দায়ে চট্টগ্রামের একটি আদালতে বাইজিদ থানার ওসি, দুই এসআইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না। এ বিষয়ে বাদীর ২৯ জানুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সবে মেরাজ উপলক্ষে সেদিন আদালত বন্ধ থাকায় পরবর্তী শুনানির দিল ধার্য করা হয়েছে ১৬ই ফেব্রুয়ারি। মূলত এই ঘটনার জের ধরে ক্ষিপ্ত হয়েছেন সাজ্জাদ। ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে হুমকি দেন।
এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আনিকা ইসলাম মনিকে হত্যার হুমকি দেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মনি।
তবে কে এই সাজ্জাদ? জানতে হলে ফিরতে হবে ২৯ আগস্ট অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে জোড়া খুনের ঘটনায়। সেদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নগরের বায়েজিদে অনন্যা আবাসিকের অক্সিজেন কুয়াইশ সড়ক হয়ে বাসায় ফিরছিলেন আনিস ও মাসুদ কায়ছার। এসময় মোটরসাইল আরোহীরা দু'জনকেই গুলি করে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পৃথক দুটি মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেন ও মো. হাসান। সাজ্জাদ হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের ছেলে। বুড়ির নাতি নামেও পরিচিতি রয়েছে তার। অন্যদিকে নগরের বায়েজিদ থানার পশ্চিম শহীদ নগর সোবাহান কন্ট্রাক্টরের বাড়ির মো. আলমের ছেলে মো. হাছান।
নগরের বায়েজিদ থানার নয়ারহাট কালারপুল এলাকায় একটি নির্মানাধীন ভবনে গুলাগুলি করে চাঁদা দাবি করে সাজ্জাদ, হাসানসহ তাদের কয়েকজন সহযোগী। এসময় এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনজন মুখোশধারী লোক নির্মানাধীন ভবনের নিচ তলায় প্রবেশ করে। তাদের প্রত্যাকের হাতে অস্ত্র ছিল। একজন উপরের দিকে একটি ফায়ার করে। সেখানে আগে থেকে বসে থাকা এক লোককেও মারধর করতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, দেশীয় তৈরী পিস্তল হাতে হাসান ও শটগান দিয়ে ফায়ার করা ব্যক্তি সাজ্জাদ।
এর আগে হাটহাজারী চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরুল আলমের পক্ষে এক ভোটারের বাড়িতে গিয়ে শাসানোর ঘটনা ঘটে। এসময় রামদা হাতে উত্তেজিত এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই যুবই ছিলেন সাজ্জাদ।
প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক কারবারি থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্ত বিস্তারে মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছে তারা। মধ্য রাতে এলাকায় তাণ্ডব চালায় এ বাহিনী। তাদের নাম মুখে নিতেও ভয় পান এলাকাবাসী।
৪ জুলাই রাত ১১টায় নগরের বায়েজিদ থানার ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের বুলিয়াপাড়া এলাকায় ওমদা মিয়া ড্রাইভার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায় একদল যুবক। সেদিন দাবি করা চাঁদা না পেয়ে প্রবাসী ইকবালের ঘরে হামলা চালানো হয়। এসময় তাঁর মা, স্ত্রী ও দু'মাস বয়সী শিশু ঘরের আসবাবপত্রের পেছনে লুকিয়ে জান বাঁচিয়েছিল। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার মামলার আসামি হিসেবে রয়েছে সাজ্জাদ ও হাসানের নাম। মামলায় অপর আসামিরা হলেন, পূর্ব কূলগাঁও খন্দকিয়ার হাট নূর মিয়ার ছেলে মো. আজম (৪০), একই এলাকার জমাদার পাড়ার মৃত শামসুল আলমের ছেলে মো. মনির উদ্দিন (৩০) ও হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডি ইউনিয়নের মো. ছাত্তারের ছেলে মো. জিকু (৩৫)।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল বায়েজিদ থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ রোডের শীতল ঝর্ণা আবাসিক এলাকায় আব্দুল কাদের সুজন নামে একজনকে কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছিলেন বুড়ির নাতি সাজ্জাদ। সুজনের পাশের বাসায় বসবাস করা দিলরুবা হিজড়ার বাসায় যেতেন সাজ্জাদ। সেখানে যাতায়াতে নিষেধ করায় মধ্যরাতে ঘর থেকে ঢেকে সুজনকে কুপিয়েছিল। ঘটনার পরদিন ১৯ মে বায়েজিদ থানায় মামলা হয়েছে। এতেও আসামি সাজ্জাদ ও হাছান। এছাড়াও মো. সোহেল, ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়। সোহেল শহীদ নগরের মৃত শের আলী কন্ট্রাক্টরের ছেলে ও ওসমান নয়ারহাটের শাহ আলমের ছেলে।
পরের মাসে অর্থাৎ ১৬ মে রাত ১টার সময় একইভাবে জমি ভরাট করার আগে চাঁদা চেয়ে চান্দগাঁও থানার হাজির পুল মাইঝপাড়া এলাকায় জহির আহমদ সওদাগরের বাড়ির মো. হাছানের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে তার ঘরে গুলি করায় জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যায়। সেদিনও সাত রাউন্ড গুলির খোসা পাওয়া যায় ঘটনাস্থলে।
মেসেঞ্জার/সাখাওয়াত/এসকে/ইএইচএম