ঢাকা,  শনিবার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল এখন ভূতুড়ে বাড়ি

মো. সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল এখন ভূতুড়ে বাড়ি

ছবি : মেসেঞ্জার

ভোলার চরফ্যাশনে আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালটি এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দুই মাস যাবত অদৃশ্য কারণে বাস টার্মিনাল থেকে কোন বাস আসা যাওয়া না করায় অযত্নে অবহেলায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে আধুনিক বাস টার্মিনালটি। পাশাপাশি বাসটার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই হয়ে উঠে মাদক সেবীদের অভয়ারণ্য। দলবেঁধে বসে মাদকের আখড়া ও জুয়ার আসর। জুয়ারী ও মাদক সেবীদের আনাগোনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস আসা যাওয়া বন্ধ করে বাজারের ভিতরে বাসের যাত্রী উঠা নামা ও ষ্টেশন স্থাপন করায় তীব্র যানযটে নাকাল হয়ে পড়েছে চরফ্যাশন পৌরসদরের ব্যবসায়ীসহ পথচারী।

যদিও বাস চালকদের দাবী পৌরসদরে একটি সিএনজি ষ্টেশন হওয়ার কারণে চরফ্যাশন থেকে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাস মালিকরা। এজন্যই তারা বাস টার্মিনাল ছেড়ে আগের ন্যায় সদর বাজারে বাস ষ্টেশন করেছেন। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুশিল সামাজের ব্যাক্তি ও পথচারীদের দাবী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক মানের এই বাস টার্মিনালটি।

চরফ্যাশন পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, পৌরসদরের যানযট নিরসনের জন্য সদর থেকে দুই কিলোমিটার দুরে পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক মানের একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল। এই টার্মিনালে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুঁটের উন্নতমানের কাঁচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। যে ভবনে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, দশটি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগারসহ প্রত্যেক রুটের জন্য পৃথক টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে টার্মিনালটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ওই বছরের ২ আগষ্ট মাসে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ৭ বছর উৎসব মুখর পরিবেশে টার্মিনালে বাস আসা-যাওয়া করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে বাস টার্মিনালটি। বাস চলাচল ও আসা যাওয়া না থাকায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক মানের এই টার্মিনালটি। এতে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামোসহ গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট বাস টার্মিনালের ভবনের কোটি টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাস টার্মিনালের চারপাশসহ মূল ভবনের বেশ কিছু স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে গেছে। ভিতর বাহিরে জমে আছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। এছাড়াও টার্মিনালটির পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষ অবাধে বিচরণ করায় স্থানীয়রা ময়লা ফেলার কারণে বাস টার্মিনাল জুড়ে রয়েছে ময়লার ভাগার। টিকিট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তুপ। সদর বাজার জুড়ে যাত্রীবাহী বাসের অবাধ বিচরণের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। পাশাপাশি সড়ক জুড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানোর কারণে সৃষ্ট যানযটে পথচারীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন পৌরশহরের ব্যবসায়ীরা।

অটো চালক মহসিন জানান, বাস টার্মিনালটি পৌর সদর থেকে দুরুত্ব থাকায় ভোলা-বরিশালগামী বাসের যাত্রী আনা নেয়া করে তাদের বাড়তি আয় হতো। যানযট মুক্ত থাকতো পৌরশহর। বাস মালিকদের খামখেয়ালীতে বাসটার্মিনালে নেই বাস। এতে বিপাকে পড়েছে অটোরিকশা চালকরাও।

বাস টার্মিনালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, বাস মার্মিনাল চালু হওয়ায় ওই খানে একটি দোকান দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রীদের সমাগমে মুখর থাকায় ভালো বেঁচা বিক্রি করে ৫ জনের সংসার চলতো তার। বাসটার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনিসহ ওই খানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

বাজারের ব্যবসায়ী শাহারিয়ার জানান, বিগত সময়ে পৌরসদর বাজারের বাহিরে বাসটার্মিনালে বাস থাকা ও ওই টার্মিনাল থেকে ভোলাগামী যাত্রীবাহী বাস আসা যাওয়ার কারণে বাজার ছিলো যানযট মুক্ত। কিন্ত বাস মালিক সমিতির খামখেয়ালীর কারণে ফের বাজার জুড়ে শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী বাসের বিচরণ। বাজারের ভিতরে দুটি ষ্টেশন জুড়ে বাস রাখা এবং বাজারের ভিতরে যাত্রী উঠানামা করার কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানযট। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বাজারের ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান দূর্ঘটনা। বাসটার্মিনালে বাস ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান বাজারের ব্যবসায়ীরা।

বাস মালিক সমিতির আঞ্চলিক চরফ্যাশন শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে সদর থেকে অটোরিকশায় বাসটার্মিনাল যেতে যাত্রীসাধারণের আরো অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশী গুনতে হয়। এতে করে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের। এবং সদর থেকে দুরত্ব হওয়ার কারণে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সবদিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজার সংলগ্ন বাসষ্টান্ডেই তারা বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছেন।

চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, দুই মাস যাবত বাসটার্মিনালটিতে কোন বাস আসা যাওয়া না করায় ওই এলাকায় কিছু অপরাধ প্রবণতা দেখা দেয়ার মতো আশংকা রয়েছে। সেইদিক বিবোচনা করে রাতে প্রায় সময় ওইসব এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিগত বছরে বাসটার্মিনালটি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। ওই ইজারার মেয়াদ এখনও চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বাস মালিকরা তাদের নিজস্ব স্টান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে বাসমালিক সমিতির সাথে আলোচনা করে ফের ওই বাস টার্মিনালে বাস স্থানান্তর করার জন্য আলোচনা চলছে।

মেসেঞ্জার/তুষার