
ছবি : মেসেঞ্জার
এক সময় ঘটা করে পালন করা হতো চৈত্র সংক্রান্তি ও হালখাতা উৎসব। বৈশাখের প্রথম দিনে ‘লাল খাতায়’ হতো এ উৎসব। তবে কালের বিবর্তনে অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে গেছে বাংলা নববর্ষের এই আমেজ। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কিছু ব্যবসায়ী পুরাতন এই ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখলেও হালখাতা উৎসবের জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির আধিপত্যের কারণে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসবের আনন্দ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে ব্যাংক লেনদেনের কারণে ‘জানুয়ারি টু ডিসেম্বরে’ চলে গেছে ‘চৈত-কাবারি’ হিসাব। তবে এবছর রামজাম সামসকে সামনে রেখে রায়পুরের ব্যবসায়ীরা আগেই হালখাতা উৎসব মেষ করছেন।
চলতি সাপ্তাহ ধরে রায়পুরে রড ও সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে হালখাতা উৎসব। স্বল্প পরিসরে কিছু মোকামঘর ও গদিতে লালখাতায় শুরু হয়েছে তাদের ব্যবসায়িক বছর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়পুর হায়দর এন্টারপ্রাইজ, জিলানী এন্টারপ্রাইজ, হাফিজ ষ্টোরসহ অর্ধশত ব্যবসায়ীদের মাঝে হালখাতা উৎসবকে ঘিরে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করানো হয়েছে। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। অনেকে আবার ক্রেতা-বিক্রেতার পুরনো পাওনা চুকিয়ে নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে গত ১০ বছরে হালখাতা উৎসবের এই আয়োজন অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালখাতার উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব করার ফলে লাল কাপড়ে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল কমে গেছে। এখন অনেকটা নিয়ম রক্ষার জন্যই হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে। সাধারণত মুসলিম ব্যবসায়ীদের নিমন্ত্রণপত্রে মসজিদের মিনার, আর হিন্দু ব্যবসায়ীদের নিমন্ত্রণপত্রে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি সম্বলিত দাওয়াতপত্র এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে এখনও কিছু ব্যবসায়ী পুরাতন ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে।
রায়পুর হায়দর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম মুরাদ বলেন, তবে যুগের পরিবর্তনে পালটে গেছে বেচাকেনা আর লেনদেনের মাধ্যম। ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করেন। হিসাব-নিকাশের জন্য বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার ও বিশেষায়িত সফটওয়্যার। কার্ড বা চিঠির মাধ্যমে এখন আর বকেয়া হিসাব স্মরণ করিয়ে দিতে হয় না। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ইমেইল ও মোবাইল। অনেকেই এখন কার্ডে কেনাকাটা করেন, বকেয়া পরিশোধ করেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ফলে কার্ড ছেপে দাওয়াত কিংবা টালি খাতা কিনে হিসাব-নিকাশ করার কোনো তোড়জোড়ও নেই।
রায়পুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এন,আর সুমন জানান, বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পয়লা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল ‘হালখাতা’। অনুষ্ঠানটি করতেন ব্যবসায়ীরা। কৃষিভিত্তিক সমাজ ফসল বিক্রি করে হাতে নগদ পয়সা পেত। ধান-পাট ছিল নগদ পয়সার উৎস। ফসলের মৌসুমে ফসল বিক্রির টাকা হাতে না এলে কৃষকসহ প্রায় কেউই নগদ টাকার মুখ খুব একটা দেখতে পেতেন না, ফলে সারা বছর বাকিতে জিনিসপত্র না কিনে তাদের কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু এখন এটি ভিন্ন চিত্র।
মেসেঞ্জার/তুষার