ঢাকা,  বুধবার
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

যে মেলায় ডুব দিয়ে হয় ‘পাপমোচন’ টাঙ্গাইলের বাসাইলে পূণ্যার্থীদের ঢল

শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যে মেলায় ডুব দিয়ে হয় ‘পাপমোচন’ টাঙ্গাইলের বাসাইলে পূণ্যার্থীদের ঢল

ছবি : মেসেঞ্জার

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিনব্যাপী ডুবের মেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। মাঘী পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা মানুষের মুখে মুখে ডুবের মেলা নামে পরিচিত। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই মেলায় নদীতে পূণ্যস্নান করলে পাপমোচন হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় জেলার দূর দূরত্ব থেকে আগত জনগণ পূজা ও স্নান পর্বে অংশগ্রহণ করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে স্নান উৎসব। নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্নান উৎসবে অংশ নেন। তারা জমির আইল ধরে ডুবের মেলায় আসেন।

স্নান উৎসবে অংশ নেওয়া পূণ্যার্থীরা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচন উপলক্ষে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব সমাপণ করেন। গঙ্গাস্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়। মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। এই স্নান অংশ নিলে পূর্ণ মিলে। দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসে গঙ্গাস্নানে অংশ নিয়ে তাদের মনের বাসনা পূরণ করে।

এই মেলা ব্রিটিশ শাসনামলে বক্ত সাধু নামে খ্যাত এই সন্যাসীর (মাদব ঠাকুর) মূর্তি প্রতিস্থাপন করে পূজা অর্চনা শুরু করেন। এই পূজা উপলক্ষে তখন থেকে গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তখন থেকে এটা ডুবের মেলা নামে পরিচিত। ডুবের মেলায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ম্নান উৎসব চলে।  নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী ম্নান উৎসবে অংশ নেন।

স্নানে অংশ নেওয়া শান্তি রায় বলেন, আমি টাঙ্গাইল শহর থেকে আজকে মাঘী পূর্ণিমার মেলায় আসছি। এখানে আমি ১০-১২ বছর ধরে আসি। এখানে এসে স্নান করি অনেক ভালো লাগে।

আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পূর্ণ্য স্থান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গঙ্গাস্নান হয়। প্রায় ১০০ বছরের উপরে এই গঙ্গাস্নান চলে আসছে। ডুবের মেলায় যারা আসে তারা মনের বাসনা নিয়ে গঙ্গাস্নান করতে আসেন। গঙ্গাস্নান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। স্নানে অংশগ্রহণ করতে আসা আরতি রায় বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করে যে আজকে এই মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে উত্তর বাহিত জলে স্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়। অনেকের মনে আশা থাকে যে স্নান করলে তাদের মনের আশাপূরণ হয়। যাদের ছেলে-মেয়ে হয় না তারা এখানে এসে স্নান করে। একেক জনে একক রকমের বাসনা নিয়ে এসে স্নান করে।

মিষ্টি বিক্রেতা ফজল আলী বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে এই মেলায় আসি। মেলায় ভালোই মিষ্টি বিক্রি হয়। মেলায় ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি করা যায়। মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়। পুরোহিত রবিন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, পূর্ব পুরুষ থেকে এই গঙ্গাস্নান শুরু হয়েছে। এই গঙ্গাস্নানকে বলে মাঘীপূর্ণিমার গঙ্গাস্নান। ১৫-২০ জন পুরোহিত এই গঙ্গাস্নানে এসেছে। দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন গঙ্গাস্নানে অংশগ্রহণ করে। পূণ্যার্থীরা তাদের মনের বাসনা নিয়ে এখানে আসেন। তারা ডুব দিলে তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়।

এ বিষয়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, পূর্বপুরুষ থেকেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘী পূর্ণিমায় ডুবের মেলা পালন করে থাকেন। মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছে।

মেসেঞ্জার/তুষার