![ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার পোড়াদহ মেলায় ২৬ কেজি কাতলা, ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার পোড়াদহ মেলায় ২৬ কেজি কাতলা, ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি](https://www.dailymessenger.net/media/imgAll/2024February/40-2502121510.jpg)
ছবি: মেসেঞ্জার
ঐতিহ্যবাহী ও একদিনের সবচেয়ে বড় বগুড়ার গাবতলীতে চার শো বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলা কাল বুধবার । এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ ও বাহারী রসালো মিষ্টি। দুই শতাধিক বিঘা জমিতে বসেছে এ মেলায় একদিনে কয়েক কোটি টাকার বিক্রি হয়ে থাকে। এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ কাতলা ২৬ কেজি এবং রসালো মিষ্টি ১২ কেজি ওজনের। নিষিদ্ধ ৫ টি বাঘাইড় মাছ নিয়ে আসায় এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ।
এবারের মেলায় গত বছর সবচেয়ে বড় সাইজের কাতলা মাছ ২৬ কেজি ওজন, ব্লাক কার্প মাছের ওজন ৪০ কেজি। প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা হিসেবে মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এটি মাছের মেলা হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। এখান থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান মেয়ের জামাইরা। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ উৎসব। অতীতের একদিনের মেলা হলেও বৃহস্পতিবার বসবে বৌ মেলা। এ মেলায় ক্রেতা শুধুমাত্র মেয়েরা।
পোড়াদহ উপলক্ষে অত্রএলাকার গ্রামগুলোতে জামাই মেয়েদের দাওয়াত করে এনেছেন। সেজন্য মেলার জন্য গ্রামগুলোতে নানা আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতি জমজমাট। স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে পোড়াদহের আশেপাশের সব গ্রামে উৎসবের ধুম লেগে যায়। প্রত্যেক বাড়ির জামাইদের দাওয়াত করা হয়। এ ছাড়াও অন্য আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে আপ্যায়ন করান স্থানীয়রা।
বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার পূর্বে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। প্রায় ৪ শো বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিলো একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।
প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয়েছে এই মেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীগণ এ মেলায় এসে তাদের না পুন্যর পসরা বসিয়েছেন।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান এলাকার আব্দুল হামিদ ও গিয়াস উদ্দিন জানান, মেলা উপলক্ষে তার মেয়ে এবং জামাইসহ নাতি-নাতনিরা এসেছেন।
একদিনের এই মেলায় লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। মেলা উপলক্ষে গাবতলী, জেলা সদর, শাহজাহানপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দী উপজেলাতেও উৎসবের আমেজ পড়েছে। তবে জায়গা স্বল্পতার কারণে একইদিনে মেলার ব্যাপ্তি গাবতলী উপজেলার দারিয়াল বাজার, অদ্দিরখোলা, পাচমাইল, কালিমাবাদ স্কুল মাঠ, দূর্গাহাটা স্কুল মাঠ, শাহজাহান পুরের মাদলা, সারিয়াকান্দীর জোড়গাছাসহ সদরের ফতেহ আলী বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
মেলায় মাছ ও মিষ্টির পাশাপাশি নাগরদোলা, সার্কাস, যাদু খেলা, ছোটদের খেলনাসহ নানা ধরনের দোকান দেখা যায়। এছাড়া কুল (বরই) এবং কেশরসহ নানা স্বাদের ফলও উঠেছে মেলায়। এমনকি বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ছিল চোখে পরার মত।
তবে আগের মত বড় বড় বাঘাইর, বোয়াল, কাতল, চিতল না পাওয়া গেলেও মাঝারি ধরনের মাছের কমতি ছিল না। এবার মেলার বড় আকর্ষণ ছিল ২৬ কেজির কাতলা এবং ১২ কেজির মাছ আকৃতির মিষ্টি। এ মেলায় আরেক বড় আকর্ষণ মাছের আকৃতির ছোট বড় সাইজের প্রায় বিশ রকমের মিষ্টি বিক্রি হয়। কাতল মাছের আকৃতির ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি গত মেলায় সবার নজর কেড়েছে।
মিষ্টি দোকানী আল-আমিন জানান, কালোজাম, ল্যাংচা, জিলাপি, চমচম, রসগোল্লা, খাজা, ঝুড়িসহ মাছ আকৃতির বড় মিষ্টি এনেছেন তিনি। মাছ আকৃতির রসালো মিষ্টি ১২ কেজি থেকে শুরু করে হাফ কেজির মাছ আকৃতির মিষ্টিও এনেছেন। দাম হাঁকছেন প্রতিকেজি ৫০০ টাকা।
মাছ ক্রেতা তানিয়া রহমান চাকরি করেন ঢাকায়। বাড়ি গাবতলী উপজেলার মালিয়ান ডাংগা। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন। তিনি জানান, বড় একটি কাতলা মাছ দাম ১৬০০ টাকা চাচ্ছে। ১২০০ টাকা কেজি বলছি কিন্তু দিচ্ছে না।
এলাকার আজাহার আলী জানান, পোড়াদহ মেলার শুরুর আগে থেকেই জুয়া বাসানো হয়েছে। এসব জুয়াতে সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যাবে। তাই জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য বিহীন মেলা দেখতে চায় এলাকার জনসাধারণ।
পোড়াদহ মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, সুন্দরভাবে মেলার আয়োজন করেছি। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এবারের মেলায় প্রায় দুই হাজারেও বেশি দোকান বসেছে। এর মধ্যে মাছের দোকানই চার শতাধিক। এসব দোকানে কয়েক কোটি টাকার মিষ্টি ও মাছ কেনা বেচার টার্গেট করা হয়েছে। মেলায় কোন জুয়া, অশ্লীল কাজ চলছে না।
গাবতলী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমকতা( ওসি) আশিক ইকবাল জানান, ঐতিহ্যবাহী পোড়দহ মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূনভাবে করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হযেছে। বুধবার সকাল থেকে শান্তিপুর্ণভাবে মেলা শুরু হয়ে চলছে। নিষিদ্ধ ৫ টি বাঘাইড় মাছ নিয়ে আসায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
বগুড়া পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা পিপিএম জানান, বগুড়ার ঐতিহ্য বাহি পোড়াদহ মেলা সুষ্ঠ ও শান্তি পুর্ন করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যগন টহল দিচ্ছে এবং আরও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজর রাখছে।
মেসেঞ্জার/আলমগীর/জেআরটি