ঢাকা,  শনিবার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

ভোলায় ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ

মো. সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভোলায় ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ

ছবি: মেসেঞ্জার

অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় আশায় তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় তরমুজ চাষ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ হিসেবে কৃষকরা জানিয়েছেন, তরমুজের ফলন আবহাওয়ার অনুকূল এবং প্রতিকূলতার উপর নির্ভর করে। তরমুজ চাষে ঝুঁকি থাকায় অনেক কৃষক বোরোধানের চাষ করেছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় ড্রাগন, ড্রাগন সুপার, গ্লোরি, জাম্বু ও বাংলা লিংক জাতের তরমুজ চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিকটন ফলন হতে পারে। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টর প্রতি খরচ হয় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা।’

কলমি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক জুলহাস বেপারী (৪২) বলেন, ‘এ বছর ২৪০ শতাংশ জমিতে গ্লোরি ও জাম্বু জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কানি প্রতি ১৯ হাজার টাকা করে এক সিজনের জন্য লগ্নি নিয়েছি। আমি ১১ বছর ধরে তরমুজ চাষ করি। চারাগাছ রোপণ থেকে অদ্য পর্যন্ত কানি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ হাজার খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে দেড় মাস পর বিক্রি করতে পারবো। সারের বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।’

পাশের জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন একই এলাকার আবদুল খালেক (৫২)। তিনি ৯৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর কিছুটা লাভ হয়েছে। এ বছর জমির পরিমান বাড়িয়েছি। সার্বক্ষণিক যত্ন নিয়ে হয় তরমুজ গাছের। চৈত্র মাসের প্রথম দিকে তরমুজ পরিপক্ব হবে।’

মৌসুমি তরমুজ চাষি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এ বছর দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তার মধ্যে ড্রাগন ও ড্রাগন সুপার জাতের তরমুজ চাষ করেছি এক একর জমিতে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের ফলন বেশী হলে লাভের মুখ দেখবে।’

চর কলমি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক মো. হোসেন (২৩) বলেন, ‘তরমুজ চাষের জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে তরমুজ বিক্রি করা পর্যন্ত পরিচর্যার জন্য মাসিক চুক্তি ভিত্তিক কাজ করেন শ্রমিকরা। আমি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে তিন মাসের চুক্তি ভিত্তিক কাজ করছি। থাকা খাওয়া তরমুজ চাষির। এই জমির পাশে টং ঘরে রাতে ঘুমাই, দিনে কাজ করি।’

জমির মালিকরা জানান, প্রতি কানি (১৬০ শতাংশ) জমি ১৯ থেকে ২৬ হাজার করে লগ্নি দিয়েছেন। যা, গত বছর ছিলো ১৮ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। তরমুজ চাষের জন্য অনেক কৃষক গত বছর লগ্নির টাকা দিয়ে রেখেছেন।

কৃষি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিগত বছরে কৃষকদের কৃষি প্রনোদনার আওতায় ৪% সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সাধারণত ১২% হারে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চরফ্যাশন সদর ব্রাঞ্চ থেকে ৯৯০ জন কৃষককে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ তরমুজ চাষি। চরফ্যাশন উপজেলায় কৃষি ব্যাংকের ৬টা ব্রাঞ্চ রয়েছে। সেগুলো হলো- দুলারহাট, শশিভূষণ, দক্ষিণ আইচা, কেরামতগঞ্জ, জনতা বাজার, চরফ্যাশন সদর। বিনা জামানতে বর্গা চাষী কৃষকদের ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকি। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আমরা কৃষকদের ঋণ প্রদান করে থাকি।’

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছানাউল্যাহ আজম বলেন, ‘এ উপজেলায় তরমুজের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। এ বছর তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। উপজেলার চর কলমি, নজরুলনগর, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নে তরমুজ চাষ বেশি হয়। বিগত দিনগুলোর থেকে এবছর তরমুজের আবাদের সাথে সাথে উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’

মেসেঞ্জার/তুষার