
ছবি : মেসেঞ্জার
বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ হামলাকারীদের ভয়ে অনেকে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি দেখতে যান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামের দেড়শতাধিক মানুষ সশস্ত্র অবস্থায় আব্দুলপুর গ্রামে যায়। এসময় তারা সাজিয়ালী-আব্দুলপুর ওয়ার্ডের মেম্বর আওয়ামী লীগ সমর্থক আনিসুর রহমান, সাবেক মেম্বর মহসীন আলী, তৌহিদুর ওরফে তৌহিদ, রমজান, লাল্টু, মিন্টু, ইসরাফিলের বাড়ি হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুর্বৃত্তদের তান্ডবে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তরা আব্দুলপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে কয়েকজনের বাড়িতে তাণ্ডব চালায়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা সকলে হৈবতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমর্থক। তারা পরিকল্পিতভাবে আব্দুলপুরের আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা এসময় ঘর থেকে নগদ টাকা, সোনার গহনা, দামি জিনিসপত্র,গরু ও ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় তারা কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ ঘটনার পর থেকে আব্দুলপুর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সামান্য একটি ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে আগুনে অনেকের বাড়ি ঘর ছাই করে দেয়া হয়েছে। এখনো আব্দুলপুরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।
ভুক্তভোগী রমজানের পরিবারের নারী সদস্যরা জানান, সেই ভয়ানক দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে। হামলাকারী শিশুদের গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে। এসব দৃশ্য ভিডিও করার সময় এক নারীকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এসময় তারা বলতে থাকে রমজানকে হাজির না করলে সব কিছু পুড়িয়ে দেবো। বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ এদিকে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ি দেখতে যান খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এসময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের নারী সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।
পরির্দশন শেষে অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ৬টি বাড়িতে জুলুম ও নির্যাতনের ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম বাচ্চারা কাঁদছে। কোলের বাচ্চার গলায়ও গাছি দা ধরা হয়েছে। একাধিক ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের বই খাতা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই নৃশংস্যতা মেনে নেয়া যায় না। ঘটনার সাথে জড়িতরা যে দলের হোক না কেনো কঠিন শাস্তি পেতে হবে। তিনি উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল)জুয়েল ইমরান জানান, আবদুলপুরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম সেখানে যায়। আব্দুলপুর গ্রাম থেকে লুট হওয়া ১১টি ছাগল ও ৮টি গরু উদ্ধার করে মালিকদের ডেকে বুঝে দেয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বড় হৈবতপুর মাঠে সেচের পানি নিয়ে গোলযোগের জের ধরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বড় হৈবতপুর ও আব্দুলপুর গ্রামবাসীর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির ৪ নেতাকর্মীসহ ৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ৪ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ জনকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়।
তারা হলেন চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের জামির আলীর ছেলে শফিয়ার রহমান ওরফে শফি (৩৭), বড় হৈবতপুর গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে হুমায়ন কবীর রাজু (৪৫), খালেক মন্ডলের ছেলে শামীম হোসেন (৩০) ও লুৎফর রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪০)। বাকি ৪ জন প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তারা হলেন বড় হৈবতপুর গ্রামের নাজমুল (৩০), সাব্বির (২৪), পাপ্পু (২২) ও রুবেল (২৫)। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য আনিসুরসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর রাজু মামলাটি করেন।
বাকি আসামিরা হলেন, আব্দুলপুরের জামির হোসেনের ছেলে তৌহিদ (৪০), তার ভাই শফিক (৩৮), আনিসুর মেম্বারের ছেলে আপন (২০), হৈবতপুর গ্রামের মৃত জহুরুলের ছেলে রমজান (৪৫), তার ভাই নজরুল (৩৭), আব্দুলপুর গ্রামের বাসেরের মেয়ে বুলবলি (৪০), একই গ্রামের মফিজুর (৫০) ও তার ছেলে বাবু (৩০), আব্বাসের ছেলে আজিম (৪৭), শাহবাজপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৬), তীরের হাটের মৃত আবু বক্কারের ছেলে আলমগীর হোসেন (৫২), মথুরাপুরের শাহজাহান গাজীর ছেলে আনোয়ার হোসেন গাজী (৪০), আমজাদ গাজীর ছেলে শান্তি গাজী (৪৫), ভগলপুরের আমিনুর রহমান বুলুর ছেলে হামিদুর রহমান লাভলু (৫০), উত্তর ললিতাদাহের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৪০), মথুরাপুরের মোবারকের ছেলে সাইফুল (৪৫), চুড়ামনকাটির সলেমান বিশ্বাসের ছেলে জাফর আলী (৫০), পোলতাডাঙ্গার আব্দুল মান্নানের ছেলে রহমত আলী (৩৫) ও আব্দুলপুর গ্রামের ডাক্তার নূর ইসলামের ছেলে টিটো (৪০)। বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেননি।
মেসেঞ্জার/তুষার