
ছবি : মেসেঞ্জার
১০ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করছে। বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে ২৮৬৯ জন স্থায়ী কর্মকর্তাকে ছাটাই করার জন্য কর্তৃপক্ষ এ বিশেষ আয়োজন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে কর্মবিরতি পালন করা কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এ কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
এর আগে, গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে একটি নোটিশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এসইভিপি ও হেড অব এইচআরডি মো. কাউসার উল আলম স্বাক্ষরিত এই নোটিশে জানানো হয়, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে ৫ টা পর্যন্ত এ মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রশ্নপত্রে ২০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্ন ৫ নম্বর করে সর্বমোট ১০০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। ৪৫ মার্কে মূল্যায়ন করা হবে এসব কর্মকর্তাদের। তবে ছাঁটাই করার এ বিশেষ পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আজ (বুধবার) সকাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করছে।
সারাদেশে এই ব্যাংকের ২০৬টি শাখা ও ১৭৭টি উপশাখা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শাখার কর্মকর্তারা এ কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, তাদেরকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিনে কাজ করেছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত এক থেকে দেড়শ ব্যক্তিকে কোন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া এসইভিপি পদে নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। অবৈধভাবে নিয়োগকৃতরাই ২৮৬৯ জন কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের এই বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, তারা ব্যাংকে আসার পর থেকে হাউজ লোনের নামে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছে ব্যাংক থেকে।
১০ দফা দাবি সমূহঃ
বিশেষ মূল্যায়নের নামে ভূয়া ও অযৌক্তিক পরীক্ষা বাতিল করতে হবে; ক্যাম্পেইন, ডিপোজিট ও একাউন্ট বাড়ানোর নামে এমপ্লীয়েদের দিয়ে ওয়াকফ্, মোহর ও নানা একাউন্ট করানো বন্ধ করতে হবে; বিভিন্ন সময় এই কাজ ঐ কাজের বাহানা দিয়ে এম্পলীয়দের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; বছরের ১৫ দিন ক্যাজুয়েল লিভ নেওয়ার সময় ম্যানেজার ও ম্যানেজার অপারেশনদের গড়িমসি বন্ধ করতে হবে; প্রতি বছর ব্যাংকের মুনাফার উপর এম্পলয়ীদের যে ইনসেটিভ দেওয়া হয় তা চালু রাখতে হবে; চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বিনা নোটিশে ৫৪৫ জন চাকুরিচ্যুতদের পূর্নবহাল করতে হবে; ৫ আগষ্টের পর প্রতিটি শাখার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজমেন্ট মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে; ফলস্বরূপ, কেবল শাখা প্রধানকে প্রশংসাপত্রের মতো অমানবিক, নির্লজ্জ পত্র বাতিল ও সকলের প্রশংসা বা স্বীকৃতি পত্রের দাবি জানাচ্ছি; হেড অফিসের নানা সময় নানা রির্পোট চাওয়ার নামে ভন্ডামী ও মানসিক টর্চার বন্ধ করতে হবে। বিনা কারণ ও বিনা নোটিশে কাউকে চাকুরিচ্যুত করা যাবেনা। বছরের সব বোনাস ও নানা সুযোগ সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণে মানব সম্পদ বিভাগকে নতুন সার্কুলার প্রণয়ন করতে হবে।
এদিকে কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এসইভিপি ও হেড অব এইচআরডি মো. কাউসার উল আলম দ্যা ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, এসিস্টেন্ট অফিসার থেকে শুরু করে সিনিয়র অফিসার পর্যন্ত বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিছু কিছু ছেলেরা পরীক্ষা ছাড়াই এপয়েন্টমেন্ট পেয়েছে। তারা শঙ্কিত, ফেল করলে হয়তো চাকরি চলে যাবে। এ কারণে তারা কর্ম বিরতির পালন করছিল। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি, তারা বর্তমানে শান্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের জন্য এ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা নেওয়ার পর তাদের মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কর্মকর্তাদের মান যাচাইয়ে এ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মেসেঞ্জার/সাখাওয়াত/তুষার