ঢাকা,  সোমবার
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

ফাঁড়ি পুলিশের তাড়া খেয়ে ট্রাকপিষ্ট হয়ে শ্রমিক নিহত

মেসেঞ্জার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৬:৪৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ফাঁড়ি পুলিশের তাড়া খেয়ে ট্রাকপিষ্ট হয়ে শ্রমিক নিহত

ছবি : সংগৃহীত

সাভারের আমিনবাজারে পুলিশের ভয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার আন্ডারপাসের সামনে গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক বারোটার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহত যুবকের নাম মো. মিরাজ (১৭)। সে আমিনবাজারের বড়দেশি এলাকায় ভাড়া বাসায় বাবা মায়ের সাথে থাকে। এলাকায় সে বেলচা শ্রমিকের কাজ করে বলে জানা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে আমিনবাজার ফাঁড়ি পুলিশের একটি টহল দল আমিনবাজার হাইওয়ে সড়কের আন্ডারপাস সংলগ্ন বড়দেশি বাজার রোডের প্রবেশমুখে সন্দেহভাজন এক যুবককে তল্লাশির উদ্দেশ্যে আটকায়। এক পর্যায় যুবককে লাঠি দিয়ে মারপিট করে। ভয়ে পুলিশ থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালানোর সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

জানা যায়, ঘটনার আগে মিরাজ কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলো। বাসায় ফেরার সময় আমিনবাজার ফাঁড়ি পুলিশের ডিউটিরত এএসআই নৃপন কুষ্টা ও তার সঙ্গীও টহলদল মিরাজকে সন্দেহভাবে আটকায়। হঠাৎ ঐ যুবককে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশের এক সদস্য। তখন প্রাণভয়ে সে দৌড়ে পালাতে গিয়ে হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে সংক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আটকে রেখে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। ঘটনাটি এক যুবক তার ফেসবুক লাইভে প্রচার করলে অনেকেই তা দেখতে পান। লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবকের মরদেহ ঘিরে তার মায়ের আহাজারি। ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের খুঁজতে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে দেখা। এসময় সাভার হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে ক্ষুব্ধ জনতা তাদের উপর চড়াও হয় এবং ফাঁড়ি পুলিশের এরকম কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে। ঘটনাটি এক যুবকের মোবাইলে চিত্রধারণ করতেও দেখা যায়।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনমনে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম দোসর পুলিশ বাহিনী সারাদেশে যে অত্যাচার, দমন-পীড়ন চালিয়েছে তার ফলও পুলিশকে ভোগ করতে হয়েছে।   তারা বলছেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় পুলিশের শরিক সারাদেশ দেখেছে। অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত— পুলিশ দু'ভাবেই শরিক হয়েছে। ঢাকার বনশ্রীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে, রডে ঝুলে থেকে প্রাণ বাঁচানোর প্রাণান্তকর চেষ্টারত একটি কিশোরকে লাগাতার গুলি করা পুলিশ যেমন দেখা গেছে, তেমনি পুলিশকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে উল্লাসের দৃশ্য‌ও দেখা গেছে। প্রথম ঘটনা থেকেই দ্বিতীয় ঘটনার হাকিকত বোঝা যায়। সেই অসহায় অবস্থায় কয়েক রাউন্ড গুলিবিদ্ধ কিশোরের কোনো আত্মীয় যদি পরবর্তীতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পুলিশের উপর অনুরূপ হামলার চেষ্টা করে তাহলে তার দায় কে নেবে?

তারা আরও বলছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পুলিশের মাঝেও আছে নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কিন্তু অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের ভিড়ে তারাও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কোনো দুর্নীতিবাজ এস‌আইয়ের অধীনে সৎ হাবিলদার বা কনস্টেবল থাকা একপ্রকার অসম্ভব। যে কারণে সৎ পুলিশদের কারণে পুলিশের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা সমাজে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, যতটা পেরেছে অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের কারণে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে।

একটি জাতীয় দৈনিকের সূত্রে জানা যায়, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহীদুল হক কর্তৃক চালু হ‌ওয়া কমপ্লেন সেলে, ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০ জুলাই ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ৬১ হাজার অভিযোগ এসেছে। এই চার বছরে বিভিন্ন অভিযোগে সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গড়ে মাসে এক হাজার ৩৫৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বাৎসরিক সংখ্যাটা যদি আমরা দেখি, ২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ ; ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৫১২; ২০২০ সালে ১৫ হাজার ২১২ এবং ২০২১ সালে ১৬ হাজার ৪১৮। অর্থাৎ, অভিযোগ এবং অভিযুক্ত পুলিশের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই।

সমাজের সুশীল সমাজ বলছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ যে সত্য, তা কিন্তু নয়! কিন্তু অর্ধেক‌ও যদি সত্য হয়, তাহলে তাও ভয়াবহ ব্যাপার! প্রতিটা সত্য ঘটনায় কোনো না কোনো সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই হয়রানির শিকার হয়েছেন। এভাবেই অতীতে যারা হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং বর্তমানে হচ্ছেন তাদের কেউ কি পুলিশকে 'বন্ধু/সেবক' হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন? তাদের পরিবারের কোনো সচেতন ব্যক্তি কি পারবে? পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতির খতিয়ান এবং হয়রানির অভ্যাস যত বাড়ছে দেশের জনসাধারণের কাছে সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে পুলিশের অবস্থান তত‌ই খর্ব হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের যে ভূমিকা ছিল তা দেখে আন্দোলনের সাথে যুক্ত কোনো ছাত্র কিংবা অভিভাবক কি পুলিশকে শ্রদ্ধা করবে? তারাই তো ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন পদ অলংকৃত করবে; তাদের মাঝে কিশোরাবস্থায় পুলিশ সম্পর্কে এমন নেতিবাচক মনোভাব ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিণতি কী হতে পারে তা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি।

একটি সূত্র বলছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ঢাকার সাভার উপজেলাজুড়েই পুলিশের রাম রাজত্ব চলেছে। অপরাধীর তকমা দিয়ে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে হয়রানিসহ, মাদক মামলায় ফাঁসানো, মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, তুলে নিয়ে নির্যাতন করাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা এলাকাতে পুলিশ করেনি। সিভিল টিমের নামে সাদা পোশাকে যাকে তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হত। তাদের কারও লাশ পাওয়া যেত পরবর্তী সময়ে। অথচ পুলিশের নাম নিয়ে এসব অপকর্ম করা হলেও পুলিশ তা বরাবরই অস্বীকার করেছে। যার ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে পুলিশের প্রতি চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে হাসিনা সরকার পালানোর পর মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দেশের বিভিন্ন থানায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ছিলাম। এসআই নৃপন কুষ্টা তখন ডিউটিতে ছিল, তার সাথে কথা বলেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এএসআই নৃপন কুষ্টা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ বা নির্যাতনের কোন বিষয় জানিনা। ঘটনাটি জানতে পেয়ে ১০ মিনিটের ভিতর পৌছায়; যেহেতু কেউ অভিযোগ করেনি তাই মামলা হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে বিস্তর জেনে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জুয়েল মিয়া।

মেসেঞ্জার/তুষার