
ছবি : মেসেঞ্জার
সন্তান চুরি হয়ে যাওয়ার ১২ বছর পরও নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে এবং বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিসহ সকলের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এক মা মোছা. তাজমিনা আক্তার। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া. শহরের সাতমাথায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ভুক্তভোগী তাজমিনা আক্তারের অভিযোগ, ২০১২ সালে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর সন্তানকে চুরি করা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও সন্তানের ওপর তাঁর পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর বগুড়া জেলা পরিষদের সামনে থেকে তিনি তাঁর চুরি যাওয়া সন্তানকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। তবে এক সপ্তাহ পর প্রতিপক্ষের চক্রান্তে পুলিশ তাঁকে আটক করে এবং তাঁর সন্তানকে আবারও প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেয়।
তাজমিনা আক্তার জানান, বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দিনের নির্দেশে এসআই মো. রাজিব হোসেন ও মো. শহিদুল তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। তাঁর অভিযোগ, থানায় তাকে আলাদা কক্ষে আটকে রেখে তার বোরকা, হিজাব ও ওড়না খুলে নেওয়া হয় এবং সারা রাত ফ্লোরে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে কোনো শুনানি ছাড়াই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ১৫ দিন কারাগারে থাকার পর ১৩ নভেম্বর বগুড়া জেলা দায়রা জজ আদালতে ডিএনএ রিপোর্ট উপস্থাপন করলে আদালত তাকে জামিন দেন এবং তার সন্তানের বিষয়ে ইতিবাচক রায় দেন। তবে মামলার আসামিরা এখনো জামিনে মুক্ত এবং বিভিন্নভাবে তাকে ও তার আইনজীবীকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মানববন্ধনে তাজমিনা আক্তার বলেন, তার মামলা থেকে আসামিদের রেহাই পেতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এমনকি আসামিরা তার সন্তানসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছে। তাকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রাণনাশের শিকার হতে পারেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, যেন তার সন্তান চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা উপযুক্ত শাস্তি পায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
তার আইনজীবী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার মক্কেলের ন্যায়বিচার পাওয়া অধিকার আছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রভাব ও হুমকির কারণে মামলার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই, এ মামলার যথাযথ তদন্ত ও বিচার হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মা তার সন্তান হারানোর ভয় না পান।”
মানববন্ধনে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সবাই দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এসএম মঈনুদ্দিন জানান, তাজমিনা আক্তার একজন প্রতারক মহিলা। ওনি অন্যের সন্তান অপহরণ করে পালাচ্ছিলেন। বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্তানসহ তাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছিল। সন্তানটিকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। আদালত যার সন্তান তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাজমিনা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা আছে তার চার্জশীট আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য তাজমিনা আক্তার ভুল বকছেন।
মেসেঞ্জার/আলমগীর/তুষার