
ছবির ক্যাপশন: আদালতের বারান্দায় বিচার প্রত্যাশীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার ছবিটি বুধবার দুপুরে তোলা - টিডিএম।
ফাল্গুনের শুরুতেই গরমের ইমেজ শুরু হয়েছে। এই গরমে মানুষের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য প্রয়োজন একটু পরিষ্কার খাওয়ার পানি। আদালতে আসা বিচার প্রার্থীদের তৃষ্ণা মিটানোর কথা চিন্তা করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলেন মুন্সিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জেলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় আদালতের বারান্দায় সুপেয় পানি রাখার ব্যবস্থা করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন।
নতুন মানবিক উদ্যোগকে ঘিরে সকাল থেকে আদালতে ঘুরে দেখা গেছে, মুন্সিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের অষ্টম তলা থেকে শুরু করে নিচতলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় একটি করে ফিলটার পানির যন্ত্র বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতিটি তলায় আসা বিচারপ্রার্থীদের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য আর দূরে কোথাও যেতে হবে না।
ঢাকা থেকে আসা আদালতে এক বিচারপ্রার্থীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকার কোন আদালতে পানি খাওয়ার এমন ব্যবস্থা দেখি নাই। তবে আজ মুন্সিগঞ্জ আদালতে এসে পানির ব্যবস্থা দেখে বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে। আমি নিজেও পানি খাচ্ছি। আমাদের জন্য বিচারকরা যে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।
ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দেখা গেছে, কাশেম নামের এক বয়স্ক লোক তার ছেলেকে দেখার জন্য গারদ খানায় এসেছে। এসময় দেখা গেছে তিনি পানির ফিলটার থেকে পানি খাচ্ছে। পানি খাওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, এই প্রথম দেখলাম আদালতে আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যারাই এই ব্যবস্থা করেছেন তারা উপরওয়ালা থেকে অনেক অনেক সওয়াব পাবেন। বিষয়টি আমার খুব ভাল লেগেছে।
নাম বলতে অনিচ্ছুক এক আদালত কর্মচারী বলেন, আদালতের পক্ষ থেকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যার খুব ভালো একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন। অনেক সময় গরমের কারণে দূরে গিয়ে পানি খেতে হয়। কাজের ক্ষতির চিন্তা করে অনেক সময় বের হতে পারি না। প্রতিটি তলায় এমন ব্যবস্থা করায় আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে। যখনই খুশি তখন আমরা তৃষ্ণা মিটানোর জন্য পানি খেতে পারব।
সরকারি কৌশলী (জিপি) ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: তোতা মিয়া বলেন, আজকে যে সুপেয় পনির ব্যবস্থা করেছেন এটা একটা মহৎ কাজ। পনির অপর নাম জীবন। আমি স্যারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট পারভেজ আলম জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের প্রতিটি পদক্ষেপে ভালো কিছু পাওয়া যায়। এমনিভাবে স্যার বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে আমি আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রোজিনা ইয়াসমিন জানান, আমি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর। ভবনের তৃতীয় তলায় এসে দেখলাম একটি নতুন পানির ফিলটার বসানো হয়েছে। শুনলাম প্রতিটি তলায় একটি করে এরকম পানির ফিলটার মেশিন বসানো হয়েছে। ফাল্গুনের শুরুতেই গরমের ইমেজ শুরু হয়েছে। এই গরমে মানুষের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য প্রয়োজন একটু পানি। ভালোই হয়েছে, অনেক সময় আদালতের আশা বিচার প্রথিরা মামলার শুনানি শুরু হয়ে যাবে এমন চিন্তা ভাবনায় পানি খাওয়া ধরলেও তারা দূরে গিয়ে পানি খেতে পারে না, কখন মামলা শুরু হয়ে যায়। এমন অবস্থাতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের এমন মহৎ কাজের জন্য অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির একাধিক আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা বলেন, পানি খাওয়ার জন্য বিচারকরা যে ব্যবস্থা করেছে খুবই ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে। যখন যার যে তলায় ইচ্ছে পানি খেতে পারবে। পানি খাওয়ার জন্য তাদের দূরে কোথাও যেতে হবে না।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের নির্দেশে আমরা সকল ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালতের সকল কর্মচারীদের সহযোগিতায় এই সুপেয় পনির ব্যবস্থা করেছি। এতে করে আদালতে আসা বিচার প্রার্থীরা একটু হলেও পানি পান করে তৃষ্ণা মিটাতে পারবে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অফিসে বাস্তবতার তুলনায় কোর্ট কাচারীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের আনাগোনা। কোর্ট কাচারীতে হত দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা এখানে আছেন তাদের জন্য আমরা সর্বোচ্চ কি পরিমাণ সেবা পৌঁছে দিতে পারি। তার যে চিন্তা চেতনা উদ্যোগ আছে আমাদের আমরা সেই সীমিত সম্পদ ব্যবহার নিশ্চিত কল্পে আমাদের আন্তরিকতার বৃহত্তর জায়গা থেকে আমাদের এই ছোট্র চেষ্টা। তিনি আরো বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো এখানে যারা আসে, কারো পকেটে টাকা থাকেনা, পানি কিনে খাওয়ার কিংবা একটু বসবার জায়গা থাকেনা। সেই জায়গা থেকে আমাদের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকরা তারা জনসেবায় অত্যন্ত নিবেদিত। বিশেষ করে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের প্রচেষ্টায় এই কাজটি করতে সফল হয়েছি।
সুপেয় পানির কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হোসাইন রনি, মানিক দাস, রহিমা আক্তার, ইফতি হাসান ইমরান, দুরদানা রহমানসহ আইনজীবী সমিতির অন্যান্য আইনজীবীরা।
মেসেঞ্জার/শুভ/তুষার