
ক্যাপশন: ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৮.৩০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলে অবস্থিত শহীদ মিনারে দারুসসালাম মডেল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন -টিডিএম।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চেতনা জাগ্রত রাখতে দারুসসালাম মডেল স্কুল মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
স্থানীয় সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৮.৩০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলে অবস্থিত শহীদ মিনারে দারুসসালাম মডেল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সকাল ৯:০০ মিনিটে চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রি-প্লে, প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অঙ্কনকৃত জাতীয় পতাকায় সবুজ, লাল ও খয়েরি রঙ; নার্সারি, কেজি, প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জাতীয় পতাকার সাথে অঙ্কনকৃত শহীদ মিনারে প্রয়োজনীয় রঙ; ৩য় হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শহীদ মিনার এবং একটি ঔচ্ছিক বিষয়ে অঙ্কন ও রঙ করার প্রতিযোগিতা হয়। পরে প্রত্যেক বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানের পুরষ্কারসহ অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে দারুসসালাম মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী তুরাগ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার পেয়েছি, যা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭৬ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতির শ্রেষ্ঠ শন্তান ভাষা শহীদদের সন্মানিত করতে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করেন, যা একুশের চেতনাকে জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘শহীদ মিনারের নকশা ও প্রতীকী তাৎপর্যের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মহান আদর্শ ফুটে উঠে, যা বাংলা ভাষার মর্যাদা সংরক্ষণের অনুপ্রেরণা যোগায়।’
দারুসসালাম মডেল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রিয়াদ ইসলাম আসিফ বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। মাতৃভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধা। আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও সংরক্ষণে কাজ করে যাব।’
সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা হক ৫২’ এর ভাষা শহীদ ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে জানান, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রথম ধাপ এবং এরই পথ ধরে বাঙালি বিশ্বের বুকে স্বাধীন দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। তাই বাঙালির আত্মপরিচয় ২১শের চেতনা চির অম্লান থাববে। বার বার বাংলার মানুষের সংকট সময়ে অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে কাজ করবে। সেই সাথে তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভাষা ভাষিদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সকলকে সজাগ ও সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সহকারী শিক্ষিকা নুরমা বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য একই সাথে কষ্টের এবং গৌরবের দিন। আমরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য সংগ্রাম ছিল না, এটি ছিল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলন ছিলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকামীদের পরিচয়। একুশের চেতনা কেবল ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি জাতির স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অনুপ্রেরণা জোগায়।’
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দারুসসালাম মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী তুরাগ। অনুষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শিক্ষকবৃন্দ জানান, মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের এই আয়োজন একুশের চেতনার পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।
মেসেঞ্জার/তুষার