ঢাকা,  রোববার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

মিরসরাইয়ে বোনের বাড়িতে বিবেদ মেটাতে গিয়ে এক প্রবাসীর মৃত্যু

মিরসরাই প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মিরসরাইয়ে বোনের বাড়িতে বিবেদ মেটাতে গিয়ে এক প্রবাসীর মৃত্যু

ছবি : মেসেঞ্জার

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটার দিকে উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের দারোগারহাট বাজারের নোয়াপাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মহিউদ্দিন উপজেলা ফিতাখালি ইউনিয়নের মদপারঘাট এলাকা নন্দীগ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।

নিহত মহিউদ্দিনের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চার বছর আগে মিরসরাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের বামন সুন্দর বাজার এলাকার নওয়াপাড়ায় মিসির আহমেদের ছেলে মো. শরীফের সাথে বিয়ে হয় নিহত মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তারের। শরিফ পেশায় গরু ব্যবসায়ী। তাদের সংসারে দুই বছর ও আট মাস বয়সের দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই দফায় দফায় বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে চাপ দিত শরীফ। সর্বশেষ শুক্রবার দিনভরও সেলিনাকে বাবার বাড়ি থেকে প্রাপ্য জমির ভাগের টাকা আনতে মারধর ও নির্যাতন করে শরীফ।

এই খবর পেয়ে বিদেশ থেকে বাড়িতে আসা সেলিনার বড় ভাই মহিউদ্দিন বিবাদ মিটাতে তার চাচাতো ভাই মো. সোহাগ, বড় বোনের ছেলে মেহেদী হাসান ও বড় বোনের জামাই আজিজুল হককে সাথে নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে সেলিনা আক্তারের স্বামীর বাড়িতে যান। সেখানে গেলে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সেলিনার স্বামী শরীফ তার বাবা মা ও আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মহিউদ্দিনকে লাথি ও কিল ঘুষি মারে।

এ সময় মহিউদ্দিনের বোন সেলিনা আক্তার ভাইকে বাঁচাতে আসলে মারধর করে তারও একটি পা ভেঙে দেয়। লাথি ও কিল ঘুষির পর ঘটনাস্থলেই লুকিয়ে পড়ে মহিউদ্দিন। পরে মহিউদ্দিনের সাথে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিম ফেরদৌস বলেন, শুক্রবার রাত এগারোটার দিকে মো. মহিউদ্দিন নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তির শরীরে জখমের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তার বলেন, শুক্রবার দিনভর বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে টাকা এনে দেয়ার জন্য আমাকে নির্যাতন করছিল আমার স্বামী। খবর পেয়ে আমার ভাই মারধরের বিষয়ে জানতে ও আমাদের সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আলোচনা করার জন্য আমার স্বামীর বাড়িতে আসলে স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ি এবং তার আত্মীয় স্বজনরা মিলে পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। এ সময় আমি বাঁধা দিলে আমাকেও মারধর করে আমার একটি পা ভেঙে ফেলে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত মহিউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে আনা জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে কাটাছড়া ইউনিয়নের দারোগারহাট বাজার এলাকার নোয়াপাড়ায় বোনের বাড়িতে এসে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি নিহত ব্যক্তির ছোট বোনের স্বামী ও তার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন মিলে প্রবাসী মহিউদ্দিনকে লাথি ও কিল ঘুসি মারে। তবে সুরতহালে তার শরীরের কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন পাইনি আমরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, পারিবারিক বিবাদ মিটাতে বোনের বাড়িতে গিয়ে বোনের স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের হাতে মাছ ধরে শিকার হয়ে প্রবাসী মৃত্যুর বিষয়টি সত্য।

এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই ঘটনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছি আমরা।

মেসেঞ্জার/বাবলু/তুষার