
ছবি : মেসেঞ্জার
অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মভিটার ভবনটি। সংস্কারের অভাবে এটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলেই এক অজানা শিহরণ জাগে, যেন এর নীরব আর্তনাদ বাতাসে ভেসে আসে। ইট, বালু, কাঠ খসে পড়ে ভবনটি ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ও বিদ্যোৎসাহী।
স্থানীয়রা জানান, পিসি রায়ের জন্মভিটা বর্তমানে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর সেখানে বখাটেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রথম বাঙালি হিসেবে গিলক্রাইস্ট স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৯২ সালে তিনি নিজ অর্থায়নে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৬ সালে তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার ‘মারকিউরাস নাইট্রাইট’ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৮৫০ সালে হরিশচন্দ্র রায় রাড়ুলী গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাড়িটি নির্মাণ করেন। এটি দুটি অংশে বিভক্ত—সদর মহল ও অন্দর মহল। সদর মহলটি কিছুটা সংস্কার করা হলেও অন্দর মহলটি অবহেলায় পড়ে আছে, যা দ্রুত সংস্কার না করা হলে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।
পাইকগাছা সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মো. মোমিন উদ্দীন বলেন, গুণী মানুষের সম্মান না দিলে নতুন গুণী মানুষের জন্ম হয় না। পিসি রায়ের জন্মভিটা সংরক্ষণ করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।
স্থানীয় বাসিন্দা অমিত দেবনাথ বলেন, পিসি রায়ের স্মরণে কিছু করা হলে এটি পাইকগাছার গর্ব হবে। তার বাড়ির সংলগ্ন দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা তার বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত।
দর্শনার্থীরা বলেন, পিসি রায়ের জন্মভিটা সংস্কার করা হলে এটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
সর্বোপরি স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, বিজ্ঞানীর জন্মভিটা সংরক্ষণ করে সেখানে জাদুঘর, গবেষণাগার ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার রাজস্ব আয় করতে পারবে। তাই দ্রুত এর সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
মেসেঞ্জার/সবুজ/তুষার