ঢাকা,  রোববার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

মেহেরপুরে অর্থঋণ মামলায় সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের ১ বছর জেল, ৩কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মেহেরপুরে অর্থঋণ মামলায় সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের ১ বছর জেল, ৩কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি : মেসেঞ্জার

মেহেরপুর অর্থঋণ আদালতে দেবাশীষ বাগচির দায়ের করা মামলায় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলের ১ বছর জেল, ৩কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেহেরপুরে যুগ্ম দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক এইচ এম কবির হোসেন এ আদেশ দেন। সরফরাজ হোসেন মৃদুল মেহেরপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। বাদী দেবাশীষ বাগচি মৃদুলের ব্যবসায়ী সহযোগী ছিলেন।

আদেশে বলা হয়েছে, ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাদীকে এবং ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে এ মামলায় তিনি যে কয়দিন হাজত খেটেছেন সে কয়দিন সাজার এক বছর থেকে কর্তন হবে।

আদেশ ঘোষণার সময় সরফরাজ হোসেন মৃদুলে মেহেরপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদেশ ঘোষণার পর পুনরায় তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলায় বাদি পক্ষে খ ম হারুন ইমতিয়াজ বিন জুয়েল এবং আসামি পক্ষে খন্দকার আব্দুল মতিন আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০২৩ সালে সরফরাজ হোসেন মৃদুলের ব্যবসায়ীক পার্টনার দেবাশীষ বাগচি আদালতে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের একটি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-৯০৭/২৩ (মেহেরপুর)।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, পারিবারিক সূত্রে বহু বছর যাবৎ ঠিকাদারি ব্যবসা করে আসছি। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের সঙ্গে যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৌশলী, এলজিইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টা নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করেছি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কোটি টাকা।

২০২১ সালের প্রথম দিকে যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা পরিসমাপ্তি ঘটালে তার সঙ্গে আমার মূলধন ও লভ্যাংশসহ আনুমানিক দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি পাওনা হয়। প্রাপ্য টাকা না পেয়ে আমি, আমার ও তার পরিবারের লোকজনসহ জেলা যুবলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। এক সময় সবার হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমার সঙ্গে হিসাব করতে রাজি হয়। আমি হিসাবে বসতে বললে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে একপর্যায়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে তখন সে মৌখিকভাবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মীমাংসা করে এবং আমাকে ২০২৩ সালের বছরের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে ঢাকায় যেতে বলে। ঢাকার আদাবরে তার বাসার সামনে গেলে রিংরোড সাহাবুদ্দিন প্লাজার ওসিস কফিশপে বসে আমাকে ২৪ জুলাই তারিখ দিয়ে রূপালি ব্যাংক মেহেরপুর শাখার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন বাদী।

আমি চেকে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী ২৪ জুলাই টাকা উত্তোলনের জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চেক জমা করি। এক সপ্তাহ পর ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করে। যেখানে লেখা আছে, গত ৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। ১ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ব্যাংক চেক ডিজাঅনার সার্টিফিকেট দেয়।

আমি বিষয়টি আসামীকে জানালে সে আমাকে আজকাল করে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতে থাকে। অতঃপর আমি বিজ্ঞ এ্যাডভোকেট সাহেবের মাধ্যমে গত ৩০ আগস্ট আসামী বরাবর এন আই এক্ট ১৮৮১ এর বিধান মতে ডাকযোগে নোটিশ প্রদান করিয়া চেকে উল্লেখিত এক কোটি আশি লক্ষ টাকা পরিশোধ করিয় চেকটি ফেরত অথবা বাতিল করার অনুরোধ করি।

চেক ডিজঅনারের মামলায় করায় মন্ত্রীর ক্ষমতায় মৃদুল উল্টো দেবাশীষ বাগচীর বিরুদ্ধে চেক চুরির মামলা করে। পরে ওই মামলায় পুলিশ চেক উদ্ধারের জন্য দেবাশীষের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি করে।

ওই ঘটনার পরে গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় মেহেরপুরের সোডাপ মিলনায়তনে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের বিরুদ্ধে করা সংবাদ সম্মেলনে পাওনা টাকা ও ন্যায়বিচার না পেলে পরিবারসহ আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য দেবাশীষ কুমার বাগচি মনু।

এদিকে, মামলার আদেশ ঘোষণার পর দেবাশীষ বাগচি মানু তার ফেসবুকে ‘আমিই মানু’ লিখে হাসিমাখা ছবি পোস্ট করেন।

মেসেঞ্জার/চান্দু/তুষার

আরো পড়ুন